দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষককেন্দ্রিক শিখন-শেখানো পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়ে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতিতে পরিণত হবে। আমরা জানি, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে হয়। কারণ তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি, যিনি নিশ্চিত করতে পারেন যে তাঁর শিক্ষার্থী যা বারবার শুনছে, বলছে, পড়ছে, করছে, দেখছে, তা নির্ভুল।
শিক্ষক যেভাবে যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাবেন, শিক্ষার্থী ঠিক সেভাবে শিখবে। শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হয়ে গেলেও শিক্ষকের ভূমিকা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। শিক্ষকরা নিজেদের দায়িত্ব যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, তাহলে নতুন শিক্ষাক্রম সাফল্য পাবে। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ।
দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে যাচ্ছেন তাঁদের প্রশিক্ষকরা। এতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টি ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এসব শিক্ষকের প্রশিক্ষকরা যে প্রকল্পের অধীনে কাজ করছেন, এর মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন যথাযথ হবে না।
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিকসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের দায়িত্বে আছে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রাম (সেসিপ)। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে সেসিপ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে তৈরি করা হয়েছে বিষয়ভিত্তিক মাস্টার ট্রেইনার। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা। প্রকল্পের কর্মকর্তারা সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়াসহ নিয়মিত তদারকি ও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। শুধু প্রশিক্ষণ নয়, সেসিপ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেশের ২৫টি থানায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস চলমান। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ১৬টি। প্রকল্প শেষ হলে এসব দক্ষ জনবল চাকরি হারাবে। ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এসব দক্ষ জনবল ছাড়া দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিটরিং অসম্ভব হয়ে পড়বে, সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। এসব কর্মকর্তা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজও করে থাকেন।
মাধ্যমিকে সব বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকা একটি বাস্তবতা। গ্রামীণ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে কে কোন বিষয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন, তা বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা এই তালিকা অনুসরণ করে তাঁর প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জন্য বিষয় বণ্টন করবেন। এর জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ।
একটি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা থাকে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। ধারাবাহিকভাবে কিভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, এ বিষয়ে আগে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত ধারণা নিতে হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়া যেকোনো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন অসম্ভব।
মাধ্যমিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে এসব দক্ষ জনবল আমাদের প্রয়োজন। এর জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। প্রকল্পের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হলে সেটা সবার জন্য লাভজনক হবে।