দেশে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিকভাবে বেড়ে চলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে বা দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকারের বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে। কিন্তু তারাও বাজারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির দাম আবার বেড়েছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে রসুনের দাম। বেশ কিছুদিন হয় বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করেছে, কিন্তু আলুর দাম কমছে না। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
একইভাবে বাজারে নতুন পেঁয়াজ এলেও কেজিপ্রতি দাম এখনো ১০০ টাকার কাছাকাছি। শীতের সবজির ভরা মৌসুমেও কমছে না সবজির দাম। বরং কিছু সবজির দাম নতুন করে বেড়েছে। যে লাউ কিছুদিন আগেও বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকারও বেশি দামে।
ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। এ অবস্থায় সীমিত আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে।
বাজারে দাম বাড়ানোর জন্য আমাদের ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব হয় না। একটু বড় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেন।
কিন্তু যখন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায় আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে, তখনো আমাদের বাজারে সেসব পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অনেকে ডলার, এলসির দোষ দেন, কিন্তু যে পণ্য আমদানি হয় না তার দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়; যেমন- ডিম ও আলু। ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, গরমে মুরগি ডিম কম দিচ্ছে, তাই দাম বাড়ছে। কিন্তু কিছু ডিম আমদানি হতেই ডিমের দাম কমে যায়। আমদানি বন্ধ হতেই আবার দাম বাড়তে শুরু করে। গরম চলে যাওয়ার পরও কি মুরগি কম ডিম দিচ্ছে? মুরগির ব্যবসায়ীরা একটি ভালো অজুহাত দিয়েছেন। নির্বাচন উপলক্ষে আপ্যায়ন, খাওয়াদাওয়া বেড়ে গেছে। তাই মুরগির সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং দাম বেড়ে গেছে। অকাট্য যুক্তি! সমস্যা হলো এসব যুক্তিতে ভোক্তার পকেট যে সাড়া দেয় না। তারা চলবে কিভাবে?
ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ছোট-বড় অসংখ্য চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, যারা বাজার অস্থির করার যথেষ্ট ক্ষমতা অর্জন করেছে। এখানে মাঝেমধ্যে দু-একটি অভিযান চালিয়ে লাভ হবে না, বাজার যৌক্তিক করা যাবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকারকে পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ নির্বিঘœ রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। বিকল্প বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।