ক্ষুদ্রঋণের
মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬
সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে, যে
প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে।
২০০৭
সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের
ব্যর্থ চেষ্টার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন নোবেল বিজয়ী
ইউনূস। জরুরি অবস্থার মধ্যে বড় সব দল রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ রাখতে বাধ্য
হলেও ইউনূসকে নতুন দল গঠনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল তখন, যা ছিল ইউনূসের
প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ।
এরপর নরওয়ের টেলিভিশনে ২০১০ এর
ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি
অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে ইউনূসের বিরুদ্ধে। সেই প্রামাণ্যচিত্র নতুন
করে সমালোচনার কেন্দ্রে নিয়ে যায় গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূসকে। ঋণ দেওয়ার পর
গ্রামীণ ব্যাংক গ্রহীতাদের কাছ থেকে যে প্রক্রিয়ায় কিস্তি আদায় করে- তা
নিয়েও শুরু হয় নতুন সমালোচনা।
দেশে ও বিদেশে বাম ধারার অনেক বুদ্ধিজীবী
দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুদ্র ঋণের বিরুদ্ধে বলে আসছেন। তাদের মতে, দারিদ্র্য
বিমোচনে এই ঋণের ভূমিকা প্রমাণিত নয়। আর গ্রামবাংলায় সুদখোর মহাজনেরা সব
সময়ই পরিচিত ছিলেন ‘রক্তচোষা’ হিসেবে। সেই বিবেচনা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাও সে সময় ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “গরিব মানুষের রক্ত চুষে
খেলে ধরা খেতে হয়।”
সরকারের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় গ্রামীণ ব্যাংক
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইউনূস এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন
করে এলেও ২০১১ সালে অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তার পদে থাকা নিয়ে
প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বছর মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইউনূসকে
অব্যাহতি দেয়, তখন তার বয়স প্রায় ৭১।
যেখানে সরকারি চাকরিতে অবসরের
সীমা তখন ছিল ৫৭ বছর, অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অবসরের বয়স
ছিল ৬০, বিচারকদের ৬৭, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ৬৫, সেই পরিস্থিতিতেও
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই অব্যাহতির আদেশকে ‘প্রতিহিংসা’ হিসেবে দেখেছিলেন
অনেকে।
ইউনূস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যান এবং
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আপিল বিভাগের আদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব
হারান।
এরপরও তাকে পদে রাখার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের অবস্থানের
বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করে। ইউনূসের বিষয়টি
নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনায় পড়তে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
ক্লিনটন
পরিবারের সঙ্গে ইউনূসের বক্তিগত বন্ধুত্বের বিষয়টি সব মহলেরই জানা।
গ্রামীণ ব্যাংকের পদ নিয়ে আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই হিলারি ক্লিনটন এ ব্যাপারে
সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল সেই সময়ে।
অন্যদিকে শেখ
হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, পদ্মা সেতু প্রকল্পে
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ঝুলে যাওয়ার পেছনেও ইউনূসের হাত রয়েছে। ওয়াশিংটনের
প্রভাবশালী বন্ধুদের তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লাগিয়েছেন বলেও অভিযোগ
করেছেন কেউ কেউ।
ইউনূস সব সময়ই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।