আজ
৫ ফেব্রুয়ারি “জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস”। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়
গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি। এই দিবসটি গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার
সুহৃদদের জন্য উৎসবের। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রীভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত
মোতাবেক প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারিকে “জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস” পালনের
সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৮ সালে দেশে দিবসটি প্রথম পালিত হয়।
সোনার বাংলাদেশ
বিনির্মাণে সোনার মানুষের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁরা দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে নীতিবান,
আদর্শ মানুষ হয়ে সকল অনিয়ম-দুর্নীতির দুরে সরিয়ে দেশ গঠনে কাজ করবে। আর এই
সোনার মানুষ গড়তে প্রথমেই যেটি দরকার তা হলো সুশিক্ষা। সুশিক্ষা মানুষের
মানবিক বোধকে জাগ্রত করে নিজেকে বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। সুশিক্ষিত
মানুষই পারে একটি সুন্দর সমাজ, সভ্য জাতি ও উন্নত দেশ উপহার দিতে।
এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পর পর গ্রন্থাগার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে।
স্মার্ট নাগরিক,স্মার্ট বাংলাদেশ, স¥ার্ট অর্থনীতি ও
স¥ার্ট সমাজ। এ ধারণাটি মূলত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক ঘোষিত
ধারাবাহিক একটি স্বপ্ন, যা ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা
করা হয়েছে। মূলত এখন জ্ঞান-বিজ্ঞানও আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার
করে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবা আরো
সহজে জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়া । এছাড়াও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের
চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে প্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের
জীবনকে সহজ করাই এই ধারণার মূল কথা।
স¥ার্ট নাগরিক গঠনের ক্ষেত্রে
শিক্ষাও গ্রন্থাগার প্রয়োজনীয়তা অনেক। গ্রন্থাগারে থাকে হরেক রকমের বই । বই
আমাদের আত্মার আত্মীয়। আমাদের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে বই।
শিশু জন্মগ্রহণের পর থেকে সমাজে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে আর বই পড়ার মধ্যে দিয়ে
তার চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটে। কথায় আছে, যে প্রজন্মের হাতে বই আছে, সে
প্রজন্ম কখনো পথ হারাবে না। কিন্তু বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম বই বিমুখ একটি
জাতি হয়ে গড়ে উঠছে। পাঠ্য বইয়ের বাইরে খুবই কম শিক্ষার্থীকে অন্য বই পড়ার
দৃশ্য দেখা যায়। বই পড়ে মানুষের চিন্তা, জ্ঞানও উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়ে।
গ্রন্থগারে বিভিন্ন ধরনের বই পড়েও বিচিত্র জ্ঞানের সমাহার মানুষকে আলোকিত
করে। মানুষের ভেতরের প্রতিভা প্রস্ফুটিত করে তুলতে গ্রন্থাগার যেন পথহারা
পথিকের আলোক বর্তিকা।
বিচিত্র জ্ঞান, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি,
ইতিহাস-ঐতিহ্য, চিন্তা ও দর্শন থাকে গ্রন্থাগারে। সেখানে পাঠকেরা অতীত ও
বর্তমানের মেলবন্ধন খুঁজে পায়। বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে
দেওয়া সাঁকো।' স্মার্ট নাগরিকের সঙ্গে জ্ঞান, গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির
গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সবের সাথে যুক্ত রয়েছে গ্রন্থাগারের। গবেষণার
কাজে গ্রন্থাগার রাখে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভুমিকা।
সরকারি গ্রন্থগারে
বইয়ে সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বই পড়ার প্রতি উৎসাহ জোগাতে বিভিন্ন
কার্যক্রম চালু করা দরকার। যেমন: মাসিক পাঠচক্র, বই পড়া প্রতিযোগিতা, বই
পাঠের গুরুত্ব নিয়ে শিক্ষা-সেমিনার ইত্যাদি। সেই সাথে বাড়াতে হবে
গ্রন্থাগারের সংখ্যা, সমৃদ্ধি, গুণগতমান ও বই পড়ার পরিবেশ। এছাড়াও জাতীয়
গ্রন্থাগার দিবসটি শিক্ষা মন্ত্রণায় মাধ্যমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
উদযাপনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেখানে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই
পড়ার গুরত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা থাকবে এবং বই পড়ার প্রতিযোগিতাও
আয়োজন করা যেতে পারে।
মানুষকে বই পাঠের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে
গ্রন্থগারের যথাযথ ব্যবহার হবে, যা শিক্ষিত ও স্মার্ট নাগরিক গঠনে সহায়ক
ভূমিকা পালন করবে। আমাদের গ্রন্থাগার যদি সমৃদ্ধ হয়, তাহলে জ্ঞান আহরণ করে
দেশের নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে স্মার্ট।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।