বিদেশি মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য।
সেই শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হয়ে আসছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা,
অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি সেখানে দেখা দিয়েছে নানা সামাজিক সমস্যা। তেলের
দাম নি¤œমুখী।
কনস্ট্রাকশন খাতে চাকরির সুযোগ কমে গেছে। ফলে
মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে
দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় চলছে ধরপাকড়। রাশিয়া-ইউক্রেন ও
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে, সে কারণে
জনশক্তি রপ্তানিতেও ভাটা পড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত
২০২২ সালের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস জরিপে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে
বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০২২ সালে মোট
অভিবাসীর ৪৮.৯৯ শতাংশই গেছে সৌদি আরবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭.০৩ শতাংশ গেছে
মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ অভিবাসী গেছে পূর্ব এশিয়ার
দেশ মালয়েশিয়ায়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে
যে পরিমাণ জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে গেছে, এর ৬৩ শতাংশই ফেরত এসেছে। শ্রমবাজার
মধ্যপ্রাচ্যে যত অভিবাসী গেছে, তার চেয়ে বেশি ফেরত এসেছিল। সৌদি আরব থেকে
২০২২ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসার হার ৪৫.৭৯ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য
দেশগুলো থেকে ১৮.১৩ শতাংশ ফেরত এসেছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার থেকে
ফেরত এসেছিল ১১.৯২ শতাংশ।
জনশক্তি রপ্তানি আমাদের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা
রাখে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা দক্ষ ও
প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের
শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। ফলে যেসব দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ
আছে, সেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। গত ডিসেম্বরে কালের কণ্ঠে
প্রকাশিত এক খবরে দেখা যায়, দক্ষ কর্মী নেয় এমন দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী
পাঠানোর কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে সে দেশে কর্মী পাঠানোর
কোটা ছিল ১০ হাজার। গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৬১৪ জন কর্মী পাঠাতে
পেরেছে বাংলাদেশ।
বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই, কিন্তু বাংলাদেশের
শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত
মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায়
বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। এসব পেশার বেশির ভাগই ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের দখলে।
অথচ পর্যাপ্ত দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে এসব পেশায় স্বদেশিদের নিয়োগ করা
সম্ভব হতো। কাজেই আমাদের এখন শ্রমবাজারের চাহিদার পরিবর্তন ও দক্ষতার বিষয়ে
নজর দিতে হবে। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর
বাড়ছে। সব কর্মক্ষেত্র সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও দক্ষ জনশক্তি নিজ নিজ
ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারে। বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে
তাল মিলিয়ে তাই জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। কোন দেশে কোন ধরনের শ্রমশক্তি
রপ্তানি করা যায়, সে ব্যাপারে আগে থেকেই জানা প্রয়োজন।
দক্ষ জনশক্তির
রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। যেকোনো দেশে মানুষই সম্পদ।
মানুষের শ্রমে-ঘামে-মেধায়-পরিকল্পনায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত
হয়। জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে
পরিণত হবে। জনশক্তির নতুন নতুন বাজারও সন্ধান করতে হবে।