পবিত্র রমজান মাস এগিয়ে আসছে। এক শ্রেণির অতি লোভী ব্যবসায়ীর কারসাজিতে এই সময়ে রমজানে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। রোজার সময় বেশি ব্যবহৃত হয় এমন প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সরকারের জন্যও বিব্রতকর হয়।
সেই কারসাজি রোধ এবং বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার অন্যান্য বছরের মতো এবারও কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। এটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বিগ্ন। রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভোজ্য তেল, চিনি, খেজুর ও চালের আমদানি শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে।
রোজা সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই সুবিধা চাল আমদানিকারকরা পাবেন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত।
তেলের ক্ষেত্রে দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে আপাতত ভ্যাট দিতে হবে না এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের। তবে এই সুবিধা তাঁরা পাবেন আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এ ছাড়া বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ের ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। খেজুর আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত।
পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, আগে যা ছিল তিন হাজার টাকা। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে এই শুল্কছাড় পাওয়া যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষ অনেকটাই নাজেহাল। বাজার নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব পণ্যে শুল্ক কমানো হয়েছে, সেগুলো নির্ধারিত মূল্যে কবে থেকে পাওয়া যাবে, কত দিন পাওয়া যাবে, সেটা সরকারকে নির্ধারণ করে দিতে হবে। এর পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে নির্ধারিত মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।