নির্বাচনি
আচরণ বিধি ভঙ্গ করে মানুষজন নিয়ে মিছিল করায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
(কুসিক) উপ- নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারকে
শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং
কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ হোসেন এই শোকজ করেন। আইন ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে কেন
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাবদিহি করার
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বিধি ভঙ্গ করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
নির্বাচনি উঠান বৈঠক করায় বাস প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী
লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা ও নবাব ফয়জুন্নেছা উচ্চ বালিকা
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তারকে শোকজ করা হয়। কুসিক নির্বাচনে
প্রচারণা শুরুর পর এ নিয়ে দুই প্রার্থীসহ মোট তিনজনকে শোকজ করা হয়েছে।
আগামী
৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ
অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন। তারা হচ্ছেন- সাবেক মেয়র ও বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু,
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা, মহানগর আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং মহানগর স্বেচ্ছাবেক দলের
সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে
প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। বিরামহীন নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক
প্রান্তে ছুটে চলছেন কুসিকের চার মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরো। এরই মাঝে
আসছে আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ। এছাড়া কোনো কোনো প্রার্থী তাদের পোস্টার
ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন।
জানা গেছে, গত ২৬ শে ফেব্রুয়ারি
বিকেলে নগরের রেসকোর্স এলাকায় নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনী প্রচারণায়
গিয়ে লোকজন ও সমর্থক নিয়ে মিছিল করেন বলে অভিযোগ উঠে। এর প্রেক্ষিতে
রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে শোকজ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোড়া প্রতীকের
মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমি যেখানেই যাই মানুষের ঢল
নামে। তারপরও আমি আমার নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছি যেন কেউ নির্বাচনী
আচরণবৃদ্ধি ভঙ্গ করে প্রচারণা না চালায়। তবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়
মানুষের অংশগ্রহণ শিথিল ভাবে নির্বাচন কমিশনের দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।
এর
আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নবাব ফয়জুন্নেছা
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উঠান বৈঠক করায় বাস প্রতীকের
প্রার্থী তাহসীন বাহার ও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তারকে শোকজ
করেছে নির্বাচন কমিশন। এই কার্যক্রমের জন্য কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেয়া হবে না- তার জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ তানিমের:
এদিকে
কুমিল্লা সিটির উপ নির্বাচনে প্রচারণা শুরুর পর থেকে পোস্টার-লিফলেট ছিঁড়ে
ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন হাতি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। এ বিষয়ে তিনি পরপর
দুইদিন দুটি অভিযোগ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, নগরীর ২নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ড, ৯ নং ওয়ার্ড,
২১ নং ওয়ার্ড ও ২৭নং ওয়ার্ড এলাকার চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি হাতি প্রতীকের
পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে এবং কর্মীদের হেনস্থা করেছে।
এ বিষয়ে নূর উর রহমান
মাহমুদ তানিম গণমাধ্যমকে বলেন, একটি অশুভ শক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে
বিভিন্ন জায়গায় আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, আমাদের নেতা-কর্মীদের হেনস্থা
করার চেষ্টা করছে। তারা কিছুটা ভয়-ভীতিও দেখিয়েছে। আমি এই বিষয়টি নির্বাচন
কমিশনকে জানিয়েছি। এখন অপেক্ষায় আছি, নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেয়- তা
দেখার জন্য।
নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রিটার্নিং
কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিটি অভিযোগই খুব গুরুত্ব সহকারে
ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ঘোড়া প্রতীকের
প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। আগেও আমরা বাস প্রতীকের প্রার্থীকে এবং একটি
স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আচরণবিধি লংঘন করায় শোকজ করেছি। আইন অনুযায়ী
নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচেষ্ট আছে।
তিনি বলেন,
কেউ সরকারি স্থাপনা ব্যবহার করে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কোন
সরকারি কর্মকর্তা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। উঠান বৈঠক বা পথ
সভার ২৪ ঘন্টা আগে পুলিশকে জানাতে হবে। প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে মাইক দুপুর
দুইটার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচনি আচরণবিধি
লঙ্ঘন করলে কে কোন দলের; তা দেখা হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন
সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটির উপ- নির্বাচনে আচরণ বিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ২৭টি
ওয়ার্ডে ৯ জন ম্যাজিষ্ট্র্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেটগণ
প্রচার-প্রচারণা শুরু হবার পর থেকে সকল প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট
সকলের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। আচরণবিধি অমান্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।