টানা
দ্বিতীয় ম্যাচে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন তামিম ইকবাল। কিন্তু বড় করতে
পারলেন না ইনিংস। অন্য ব্যাটসম্যানরাও পারেননি তেমন কিছু করতে। আব্দুল
গাফফারের দারুণ বোলিংয়ে অল্পে আটকে গেল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। পরে
সাব্বির হোসেনের ফিফটিতে জিতল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
ঢাকা প্রিমিয়ার
লিগে একই দিনে সাইফ হাসান ও ফজলে মাহমুদের ফিফটিতে জয় পেয়েছে শেখ জামাল
ধানমন্ডি ক্লাব। অন্য ম্যাচে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও আফিফ হোসেনের পঞ্চাশ
ছোঁয়া ইনিংসের পর সাইফ উদ্দিনের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জয়রথ অব্যাহত রেখেছে
আবাহনী লিমিটেড।
প্রাইম ব্যাংকের জয়যাত্রা থামিয়ে গাজী গ্রুপের চতুর্থ
লিগের
প্রথম চার রাউন্ডে জয়ী প্রাইম ব্যাংককে রোববার ৬ উইকেটে হারিয়েছে গাজী
গ্রুপ। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে ১৮২ রানের লক্ষ্য ২১ বল
বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছে দলটি।
পাঁচ ম্যাচে গাজী গ্রুপের চতুর্থ জয় এটি। সমান ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের জয়ও ৪টি।
গাজী
গ্রুপের জয়ে বল হাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল আব্দুল গাফফার সাকলাইন। ক্যারিয়ারের
দ্বিতীয় লিস্ট 'এ' ম্যাচ খেলতে নেমে ২৪ রানে ৪ উইকেট নেন ২৬ বছর বয়সী
পেসার। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে
প্রাইম ব্যাংকের তামিম ছাড়া কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। একপ্রান্ত আগলে
রাখলেও রানের গতি অবশ্য বাড়াতে পারেননি অধিনায়ক তামিম।
২৯তম ওভারে
গাফফারের প্রথম শিকার হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন অভিজ্ঞ ওপেনার। ৬ চারে ৮৮ বলে
৫৪ রান করেন তিনি। এরপর সাব্বির রহমানও দ্রুত ফিরলে একশর আগে ৬ উইকেট
হারায় প্রাইম ব্যাংক।
একশ রান করতে তাদের খেলতে হয় ৩৪ ওভার পর্যন্ত।
ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ায় ১৩০ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে বসে দলটি। এরপর হাসান
মাহমুদকে নিয়ে দশম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন অলক কাপালি।
১টি করে চার-ছক্কায় ৩১ বলে ২২ রান করে আউট হন হাসান। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৪ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন অলক।
গাফফারের ৪ উইকেট ছাড়াও কিপটে বোলিংয়ে ২টি করে উইকেট নেন শেখ পারভেজ রহমান ও মইন খান।
রান
তাড়ায় গাজী গ্রুপের শুরুটাও তেমন ভালো হয়নি। পঞ্চাশের আগে ৩ উইকেট হারায়
তারা। আল আমিন জুনিয়রও টিকতে না পারলে ৭০ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে চাপে
পড়ে যায় তারা।
পরে হাল ধরেন সাব্বির হোসেন ও মাহফুজুর রহমান। দুজনের রয়েসয়ে ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে জয়ের পথে এগোতে থাকে গাজী গ্রুপ।
৩৭তম
ওভারে দ্রুত ২ রান নিতে গিয়ে পায়ের পেশিতে টান লেগে মাঠ ছেড়ে যান সাব্বির।
পরের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে একই সমস্যায় ফিরে যান মাহফুজুরও, ২৮ রান করতে
৬৭ বল খেলেন তিনি।
মাহফুজুর আহত অবসর হওয়ার পর আবার ব্যাটিংয়ে নামেন
সাব্বির। যদিও টিকতে পারেননি আর বেশিক্ষণ। ৪১তম ওভারে পেশির টানে
দ্বিতীয়বার মাঠ ছাড়েন তিনি। ৮ চারে ৮৩ বলে তিনি করেন ৬৪ রান। ১৩ ম্যাচের
ক্যারিয়ারে তার চতুর্থ ফিফটি এটি।
পরে বাকি কাজ সারেন মইন ও পারভেজ।
সাইফ-ফজলে মাহমুদের ফিফটিতে জিতল শেখ জামাল
হেরেই
চলেছে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে তাদেরকে ৬
উইকেটে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ২২৯ রানের লক্ষ্য ৩৩ বল আগেই
ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
পাঁচ ম্যাচে শেখ জামালের চতুর্থ জয় এটি। সমান ম্যাচে এখনও প্রথম জয়ের অপেক্ষায় রূপগঞ্জ টাইগার্স।
৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জয়ের নায়ক ফজলে মাহমুদ। এছাড়া ওপেনিংয়ে নেমে ৬৯ রান করেন সাইফ হাসান।
অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এদিন বল হাতে ১ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে করেন ৩৪ রান।
টস
হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই সাকিবের বলে ঝড় তোলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রথম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান নেন তরুণ বাঁহাতি ওপেনার। সাকিবের
পরের ওভারে ছক্কা ওড়ান আরেক ওপেনার মাহফিজুল ইসলাম।
তবে দুজনের কেউই
ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৭ বলে ৩০ রান করে আউট হন মামুন। ৩৮ বলে ২৪ রান
করেন মাহফিজুল। পরের ব্যাটসম্যানরা হতাশ করলে একশর আগে ৬ উইকেট হারায়
রূপগঞ্জ টাইগার্স।
সপ্তম উইকেটে ৯৮ রানের জুটি গড়েন আব্দুল্লাহ আল গালিব
ও সালমান হোসেন। ৯০ বলে ৫১ রান করে গালিব আউট হলে ভাঙে জুটি। ইনিংসের শেষ
বলে থামেন সালমান; ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৮৭ বলে ৬৭ রান করেন তিনি। জিয়াউর
রহমান নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। রান তাড়ায় সৈকত আলি শুরুতেই ফেরার পর তিন
নম্বরে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারেন সাকিব। দুই বল পর আরেকটি চার মারেন
তিনি। অন্য প্রান্তে সাইফও রান তুলতে থাকেন দ্রুত। দুজনের জুটিতে আসে ৯৬
বলে ৯৪ রান। সাকিবের বিদায়ে ভাঙে জুটি।
৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৮ বলে
পঞ্চাশ করেন সাইফ। রোহানাত দৌল্লাহ বর্ষণের বলে ক্যাচ আউট হয়ে থামে তার ৭
চার ও ৩ ছক্কায় ৬৯ রানের ইনিংস।
এরপর নুরুল হাসান সোহান বেশি কিছু করতে
পারেননি। তবে তাতে দলকে ভাবনায় পড়তে দেননি ফজলে মাহমুদ ও ইয়াসির আলি
চৌধুরি। পঞ্চম উইকেটে ৮৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে
যান তারা।
৮৩ বলে ৩ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৬২ রান করেন ফজলে মাহমুদ। ইয়াসিরের ব্যাট থেকে আসে ৫ চারে অপরাজিত ৪১ রান।
ছুটছে আবাহনীর জয়রথ
বিকেএসপির
৪ নম্বর মাঠে সিটি ক্লাবকে ৫২ রানে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড। ২১৭ রানের
পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে ১৬৫ রানে গুটিয়ে দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
পাঁচ ম্যাচে এটি তাদের পঞ্চম জয়। সমানসংখ্যক ম্যাচে সবকটিই হারল সিটি ক্লাব।
ব্যাটিংয়ে
২৩ রানের পর বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন সাইফ
উদ্দিন। নাঈম ৭৯ বলে ৫৪ ও আফিফ ৭৩ বলে ৬৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম নেওয়া তাসকিন আহমেদ লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৭ ওভারে ২২ রানে নেন ২ উইকেট।
টস
হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নাঈম ছাড়া আবাহনীর শুরুর দিকে ব্যাটসম্যানরা কেউই
তেমন কিছু করতে পারেননি। ৭১ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করা নাঈম নিজের ইনিংস সাজান ৭
চার ও ১ ছক্কায়।
পাঁচ নম্বরে নেমে ১ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আফিফ।
দুই অঙ্ক ছুঁলেও বলার মতো কিছু করতে পারেননি এনামুল হক, সাব্বির হোসেন, জালের আলি, মোসাদ্দেক হোসেনরা।
সিটি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন নাইমুর রহমান।
রান
তাড়ায় শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারায় সিটি ক্লাব। ৭৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের
পর ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪০ রানের জুটি গড়েন মইনুল ইসলাম ও ইফরান হোসেন।
আট নম্বরে নেমে দলের সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন ইফরান। মইনুলের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান।