চোখে
মুখে এক রাজ্য হতাশা নিয়ে কুমিল্লা কান্দিরপাড়ের ফুটপাতগুলোতে চলছে ঈদের
বেচাকেনা। ভিড় নেই; বিক্রি নেই; আছে কেবল উচ্ছেদের ভয়। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র
করে ভয়-ডর উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়েই অল্প দামের বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি
করছে ফুটপাতের পোশাক ব্যবসায়ীরা।
গতকাল (শনিবার) কুমিল্লা টাউন হলের
সামনে কাঠের বক্সের মধ্যে বাচ্চা ও বড়দের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসা বেশ
কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতারা শপিংমলে কেনাকাটা করার
কারনে দিনদিন সংকীর্ণ হয়ে পরছে ফুটপাতের বেচাকেনা। পবিত্র রমজানের রোজা
উনিশ ছাড়িয়ে বিশে পা রাখতে চলেছে। পছন্দের পোশাক কেনার জন্য নামি-দামি
শপিংমলগুলোতে ইতিমধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। তবে ফুটপাতে ঐভাবে
শুরু হয়নি ঈদের বেচাকেনা। এখনও কারো মুখেই ফুটেনি আনন্দের হাসি। তবুও
ফুটপাতে জমজমাট বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন বিক্রেতারা।
দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে
ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করা খোরশেদ আলম খোকন বলেন, যৌবনে এসেছি ফুটপাতে;
ফুটপাতের বেচাকেনা করেই আজ মুখের দাঁড়িতে পাক ধরেছে। ছোটবেলা থেকে কাপড়
বিক্রি করছি অন্য কাজ শিখিনি। ক’দিন পর পর পুলিশ আমাদেরকে সরিয়ে দেয়। চলে
যেত হয় কিছুদিনের জন্য। এই শহরে আমাদের মত মানুষদের কর্মসংস্থানের বিকল্প
কোনো জায়গা না থাকায় আবারও ফিরে আসি প্রিয় এই জায়গায়।
খোরশেদ আলম
খোকনের মত কুমিল্লা কান্দিরপাড়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১ থেকে দেড়শো জন
ফুটপাত ব্যবসায়ী আছে। যারা দীর্ঘদিন যাবত এই ফুটপাতের বেচাকেনা দিয়ে
পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই
কান্দিরপাড়ের ফুটপাতে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে স্থায়ীভাবে পোশাক বিক্রি করার
স্বপ্ন দেখছেন।
কুমিল্লা ঝাগড়ঝুলি থেকে কান্দিরপাড়ের ফুটপাতে পোশাক
কিনতে আসা মাহেন্দ্র ট্রাকের ড্রাইভার শাহিন আলম বলেন, ২৫’শ টাকা নিয়ে
নিজের জন্য এবং ছোট্ট বোনের জন্য পোশাক কিনতে এসেছি। এখানে কম দামে ঈদের
কেনাকাটা করতে পারি তাই অনেক দূর থেকে এখানে আসি। আজকে দু’জনের পোশাক কেনার
পর আরও ৫’শ টাকা অবশিষ্ট আছে এ টাকা দিয়ে মায়ের জন্য একটি কাপড় কিনবো।
কুমিল্লায়
বসবাস করা সমাজের নি¤œ আয়ের মানুষের সবচেয়ে বড় শপিংমল কান্দিরপাড়ের এই
ফুটপাত। সমাজের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত মানুষগুলো যখন ঈদের শপিং করার জন্য
বড়-বড় শপিংমলে ভিড় জমায়; তেমনি নি¤œ আয়ের মানুষগুলো অল্প টাকায় রঙিন পোশাক
কিনে ঈদের আনন্দ উদযাপনের জন্য আত্মতৃপ্তি খুঁজে বেড়ায় ফুটপাতের পোশাকের
পসরায়।
শপিংমলে যেখানে এক হাজার টাকায় একটি প্যান্ট কিনতে কষ্ট হয়ে
যায়। সেখানে ফুটপাত থেকে একই টাকায় তিনটি প্যান্ট কিনতে পারেন এই নি¤œ আয়ের
মানুষরা। কুমিল্লা কান্দিরপাড়ের ফুটপাতের দোকানগুলোতে বিক্রেতারা ছেলেদের
জন্য ফুল প্যান্ট, থ্রি-কোয়াটার, গেঞ্জি, লুঙ্গি, ট্রাউজার, কার্টুন
প্যান্ট, বেল্ট ও ওয়ালেট এবং বাচ্চা ও মাঝারি বয়সী মেয়েদের জন্য জামা,
গেঞ্জি, ছোট প্যান্ট ও চশমা বিক্রি করেন তারা। দাম কম হওয়ায় কুমিল্লা জেলার
বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন কেনাকাটা করার জন্য।
কুমিল্লা
কান্দিরপাড়ের ফুটপাত দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ২’শ
থেকে ৪’শ টাকায়। ট্রাউজার বিক্রি হচ্ছে দেড়’শ থেকে ২’শ টাকায়।
থ্রি-কোয়াটার বিক্রি হচ্ছে ১’শ থেকে ২’শ টাকায়। কার্টুন প্যান্ট বিক্রি
হচ্ছে ২’শ টাকায়। শার্ট বিক্রি হচ্ছে ১’শ ৮০ থেকে ২’শ টাকায়। বড়দের গেঞ্জি
বিক্রি হচ্ছে ১’শ ৫০ থেকে ১’শ ৮০ টাকায়। বাচ্চাদের থ্রি-কোয়াটার পাওয়া
যাচ্ছে ৭০ টাকায়। গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে ১’শ থেকে দেড়’শ টাকায়। মেয়েদের জামা
বিক্রি হচ্ছে ১’শ ২০ থেকে ৫’শ টাকায়। বাচ্চাদের চশমা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে
১’শ টাকায়। বড়দের বেল্ট বিক্রি হচ্ছে ১’শ থেকে আড়াই’শ টাকায়। ওয়ালেট বিক্রি
হচ্ছে ৫০ থেকে ৩’শ টাকায়।
ঢাকার গুলিস্তান থেকে কম দামে পোশাক কিনে
কান্দিরপাড়ের এনে বিক্রি করেন ক্ষুদ্র এই ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। কথা হয় আরেক
ফুটপাত ব্যবসায়ী রফিকের সাথে। তিনি বলেন, সকাল ১০টায় এসে সারাদিনে বিক্রি
করেছি মাত্র ৩’শ টাকা। কাস্টমার সব বড়-বড় মার্কেট থেকে কেনাকাটা করে। যার
কারনে আমাদের এখানে এখনও তেমন বিক্রি হচ্ছে না। তাছাড়া ক’দিন পর পর
আমাদেরকে টাউন হলের সামনের এই জায়গাটি ছেড়ে দিতে হয় যার কারনে মানুষ এসে
পোশাক না কিনতে পেরে ফিরে যায়।
বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে কুমিল্লা
কান্দিরপাড়ে স্থায়ী এবং সাবলীলভাবে নির্ভয়ে বেচাকেনা করার সুযোগ পাবে
ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। আসন্ন ঈদে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত সকল পরিবারের
পাশাপাশি নি¤œ আয়ের মানুষের মুখে ফুটবে আনন্দের হাসি এমনটাই প্রত্যাশা।