কুমিল্লায়
শবে কদরের রাতে মানুষের উপচে পরা ভিড়ে দিশেহারা ক্রেতারা। নিঃশ্বাস ফেলার
সুযোগ পাচ্ছে না বিক্রেতারা। পুরোদমে শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদের বাকি
আর মাত্র ২ থেকে ৩ দিন। শেষ দিকের কেনাকাটায় পুরো পরিবার নিয়ে শপিংমলে ভিড়
করছেন ক্রেতারা। কার আগে কে ঢুকবেন, কার আগে কে পছন্দের পোশাক কিনবেন তা
নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে শপিংমলে। দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ক্রেতারা
ক্রয় করছেন ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি কালেকশনের বিভিন্ন পোশাক। নামি-দামি
ব্যান্ডের পোশাক কেনার প্রতিও ঝুঁকছে অনেকে। পছন্দের পোশাকের সঙ্গে অনেকে
কিনছেন জুতা ও অন্যান্য অনুষঙ্গ। ক্রেতাদের উপচে পরা ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে
কুমিল্লার শপিংমলগুলো।
গতকাল (শনিবার) সকাল ৯টায় শপিংমলের তালা খোলা
থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ১২টায় তালা বন্ধ করার পূর্ব পর্যন্ত পোশাক, জুতা,
কসমেটিকস সহ সব ধরনের দোকানে পুরোদমে চলে ঈদের জাঁকজমকপূর্ণ বেচাকেনা।
লাইলাতুল কদরের রাতেও ছোট-বড় শপিংমল এবং ফুটপাতের প্রায় সবখানে
ঝাঁকজমকপূর্ণভাবে নতুন পোশাক কেনার জন্য ভিড় করে ক্রেতারা।
আসন্ন ঈদকে
ঘিরে আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা নিয়ে কদরের রাতে সাত্তার খান শপিংমলে চলছে
ঈদের নতুন পোশাক কেনাকাটা। ছোট বাচ্চা, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সহ
নানান পেশার মানুষের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠেছে সাত্তার খান শপিংমলের
সম্মুখস্থল। পছন্দের নতুন পোশাক কেনার জন্য ভিড় এড়িয়ে ধাক্কাধাক্কি করে
শপিংমলে প্রবেশ করছেন ক্রেতারা।
নগরীর অশোকতলা থেকে বাবা-মায়ের সাথে
সাত্তার খান শপিংমলে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মিফতাহুল জান্নাত ফাহমিদা
বলেন, আব্বু আমাকে আমার পছন্দের আলিয়া কাট কিনে দিয়েছে। আমি অনেক খুশি।
আম্মু, ভাইয়া এবং দাদা ভাইয়ার জন্যও আব্বু অনেক কেনাকাটা করেছে।
সাত্তার
খান শপিংমলের কাপড় দোকানদার জাকারিয়া বলেন, আজ বেচাকেনা অনেক ভালো।
বেশিরভাগ বড় বড় কাস্টমার আসছে। এ বছরের বিক্রি অন্যান্য সকল বছরকে ছাড়িয়ে
যাবে। স্টকে প্রচুর পোশাক আছে তবুও মনে হচ্ছে শেষ দিকে পোশাক সঙ্কট দেখা
দিবে। তাছাড়া এই মুহুর্তে ঢাকা থেকে পোশাক কেনার সুযোগ পাওয়া অনেক কঠিন
হবে।
হৈ-হুল্লোড়, ধাক্কাধাক্কি ও চাপাচাপির মধ্যেও বিরতি নেই খন্দকার
হক শপিংমলের ঈদের কেনাকাটা। সম্মুখস্থলে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের উপস্থিতিতে
পা ফেলার জায়গা পাচ্ছে না ক্রেতারা। শপিংমলের ভেতরেও একই অবস্থা। তবুও নতুন
পোশাক কেনার উদ্দীপনা নিয়ে দোকানে দোকানে ধর কষাকষির মাধ্যমে নতুন পোশাক
ক্রয় করছেন ক্রেতারা।
নগরীর রানীর বাজার থেকে খন্দকার হক শপিংমলে ঈদের
পোশাক কিনতে আসা সাব্বির রহমান খান বলেন, পরিবারের সবার জন্য পোশাক, জুতা,
কসমেটিকস আইটেম সহ সব ধরনের কেনাকাটা শেষ। দাম নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
প্রত্যেকের তাদের উপার্জনের উপর ভিত্তি করে কেনাকাটা করা উচিৎ।
খন্দকার
হক শপিংমলে কথা হয় জুতা দোকানদার ইকবালের সাথে। তিনি বলেন, আজ প্রায় দেড়
লক্ষ টাকা বিক্রি হয়েছে। এ বছর বিক্রি অনেক ভালো হচ্ছে। ঈদের আগে আরও ৭
থেকে ৮ লক্ষ টাকা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি।
কারো মুখে হাসি কারো
মুখে বিরক্তির চাপ। দাম, সাইজ ও পছন্দের পোশাক না পাওয়া নিয়েও রয়েছে
ক্রেতাদের নানা অভিযোগ। পছন্দ না হলেই এক শপিংমল পরিবর্তন করে অন্য শপিংমলে
ভিড়ছেন ক্রেতারা। উদ্দেশ্য একটিই ক্রয় ক্ষমতার ভেতর নিজের জন্য ও পরবারের
জন্য সবচেয়ে ভালো পোশাক ক্রয় করা।
নগরীর মাঝিগাছা থেকে সাত্তার খান
শপিংমলে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ওমর ফারুক বলেন, অনেক ধাক্কাধাক্কি করে
ভিতরে গিয়ে অনেকগুলো দোকান ঘুরেছি। কিন্তু ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পোশাক পাইনি।
এখন অন্য শপিংমলে যাচ্ছি। বাজেটের মধ্যে নিজের জন্য এবং আব্বা-আম্মার জন্য
পছন্দের ভালো পোশাক ক্রয় করার চেষ্টা করছি।
নগরীর এস আর প্ল্যানেট
শপিংমলে গিয়ে দেখা হয় ৭ বছর বয়সী একটি মিষ্টি বাচ্চার সাথে। নতুন পোশাক
পেয়ে সে অত্যন্ত আনন্দিত। তার মতো প্রায় সবগুলো শপিংমলে বাবা-মায়ের সাথে
নতুন পোশাক কেনার জন্য শপিংমলে এসেছেন বাচ্চারা। কৌতুহলী এই বাচ্চাগুলোর
মনের ভেতর ছড়িয়ে পরেছে ঈদের আনন্দ। নতুন পোশাক পেয়ে বাবার জন্য মনে জমেছে
অফুরন্ত ভালোবাসা।
কুমিল্লার ছোট-বড় সবগুলো শপিংমলে গিয়ে দেখা যায়,
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও রমজানের শেষ দিকে শপিংমলগুলোতে ক্রেতারা ঈদে
তাদের নতুন পোশাক ও অন্যান্য অনুষঙ্গ কেনার জন্য ভিড় এড়িয়ে শপিংমলে প্রবেশ
করছেন। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে আপার ফ্লোর পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি দোকানে
চলছে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা।
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ছোট-বড় সর্বস্তরের
মানুষের মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসন্ন ঈদে সকলের ঘরে
পৌঁছাক ঝলমলে নতুন পোশাক। ঈদের সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক ধনী-গরিব সকলের মাঝে।
উচ্ছ্বসিত হউক প্রতিটি আত্মা এমনটাই প্রত্যাশা।