চাঁদপুরে
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামীকে যশোরের
বেনাপোল থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার র্যাব-৬-এর পরিচালক
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফিরোজ কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-৬-এর
পরিচালক বলেন, ‘গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে ঘটনার এক মাস পর আসামি ইব্রাহিম
প্রধানিয়াকে (৩৮) গ্রেফতার করা হলো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সত্যতা
স্বীকার করেছে। আসামি জানায়, গ্রেফতার এড়ানোর জন্য যশোর জেলার বেনাপোল
পোর্ট থানাধীন বেনাপোল ডিগ্রি কলেজ এলাকায় বসবাসরত তার আত্মীয়ের বাড়িতে
নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছিল। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গ্রেফতার
আসামিকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
র্যাব
জানায়, গত ১০ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ থানা এলাকায়
ইব্রাহিম প্রধানিয়া নির্যাতন করে স্ত্রী খাদিজা আক্তারের (২৩) শরীরে ডিজেল
ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ
থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে
ভিকটিমের শাশুড়িকে মামলার পরপরই গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্ত স্বামী
আত্মগোপন করে। আলোচিত এ হত্যাকা-ের মূল অপরাধী ইব্রাহিমকে গ্রেফতারের জন্য
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের সহযোগিতা চান। এরপর
আসামিকে গ্রেফতারে র্যাব-৬ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। বেনাপোল ডিগ্রি
কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ মে রাত ১টা ২০ মিনিটে মূল আসামিকে গ্রেফতার
করা হয়। তার বাড়ি চাঁদপুরের বকচর গ্রামে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বকচর
গ্রামের খাদিজার সঙ্গে ইব্রাহিমের পারিবারিকভাবে চার বছর আগে বিয়ে হয়।
তাদের পরিবারে দুটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। গত এক বছর ধরে ভিকটিমকে
বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার নিয়ে আসার জন্য তার স্বামী ও
শাশুড়ি বিভিন্নভাবে চাপ দিতো। মাঝে-মধ্যে শারীরিক নির্যাতন করতো। ভিকটিমের
বাবা দরিদ্র হওয়ায় তাদের দাবিকৃত ফার্নিচার দিতে না পারায় ভিকটিমকে শারীরিক
নির্যাতন করে। এ নিয়ে এলাকায় স্থানীয় মেম্বার ও মুরুব্বিদের নিয়ে
একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। সালিশে ভালো ব্যবহার করার অঙ্গীকার করলেও পরে
আবারও বিভিন্ন অযুহাতে ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো স্বামী ও
শাশুড়ি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ঈদুল ফিতরের দিন (১০ এপ্রিল ২০২৪) রাতে কথা
কাটাকাটির জেরে ভিকটিমকে তার স্বামী ও শাশুড়ি নির্যাতন করে এবং একপর্যায়ে
বাড়িতে থাকা ডিজেল ভিকটিমের শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ভিকটিমের
ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে তার প্রায়
সম্পূর্ণ শরীর আগুনে পুড়ে যায়। পরে তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন
ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল
মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয়।