নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সড়কে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছেই।
প্রতিদিনই অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে
দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা-ও বলা যায়। গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার দিনের
বিভিন্ন সময় নরসিংদীতে ব্যান্ডের গায়কসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪
জন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সড়ক দুর্ঘটনা
সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সারা দেশে গত এপ্রিলে ৬৫৮টি সড়ক
দুর্ঘটনায় ৬৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৮৬৬ জন। বিআরটিএর তথ্য
বলছে, এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে।
বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যাত্রী বা পথচারীদের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।
নিরাপদ
সড়ক চাই আন্দোলনের এক সমাবেশে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অন্যতম জাতীয় সমস্যা
হয়ে দেখা দিয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাসের অপেক্ষায় আছে। এই আইনের আওতা
বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সংসদে পাসের অপেক্ষায় থাকা
সড়ক পরিবহন আইনে চালক, চালকের সহকারী, মালিক ও বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট
এজেন্সিসহ সবার দায়ই যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সারা দেশে কোন ধরনের সড়কে কোন গাড়ি সর্বোচ্চ কত গতিতে চলতে পারবে, সম্প্রতি তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
কিন্তু
একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে ভিন্ন গতিতে চলতে বলা হয়েছে। লেনভিত্তিক
গতি আলাদা করা হয়নি। গতিসীমা নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সড়কে চলা গাড়ির
বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে আনা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কে যানের গতি কমিয়ে
দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে শৃঙ্খলা দরকার।
শুধু
যানের গতি কমলে বিশৃঙ্খলা কমে আসার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
তাঁরা এই গতি নির্দিষ্ট করে দেওয়ার মধ্যে কোনো বিজ্ঞানসম্মত উপায় খুঁজে
পাচ্ছেন না। তাঁদের মতে, লেনভিত্তিক গতির বিষয়টি বাস্তবায়ন করা জরুরি ছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে সড়কে শৃঙ্খলা না ফিরে বরং গতির ভিন্নতার
কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, সড়কভিত্তিক
গতির নির্দেশনা দিয়ে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না, বরং লেনভিত্তিক গতি নির্ধারণ
করতে হবে। সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন হলো, একই পথে ভিন্ন ভিন্ন গাড়ি ভিন্ন গতিতে
চলবে কী করে? বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গতিসীমার এই নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করা
খুবই কঠিন হবে।
বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে
চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়মের কারণেও রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল
লেগেই আছে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া
মনোভাবের কারণে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে শৃঙ্খলা
নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো মূল্যে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে
হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া, গাড়ির ফিটনেস-কোনো ব্যাপারেই
আপস করা যাবে না। অনিয়মকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সড়কে শৃঙ্খলা
ফেরাতে শুধু একটি কঠোর আইন করলেই সব দায়িত্ব পালন করা হয়েছে মনে করলে চলবে
না। আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।