অনেকে ঘুমানোর আগে ফোন স্ক্রল করেন, অনেকে আবার সিনেমা বা সিরিজ দেখতে বসেন কিংবা বই পড়তে শুরু করেন। ইচ্ছাকৃত এই দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়ে য়ায়। একটা সময় যা অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা জানান, আগে বেশিরভাগ বয়ষ্ক মানুষ ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভুগতেন। আর বর্তমানে তরুণ বয়সেই ঘুমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকের। রাত জেগে স্মার্টফোন ব্যবহার আর সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি অনেকের রাত জাগার অভ্যাস আরও বাড়িয়েছে। অনেকে তো সারারাত জেগে ভোরবেলার দিকেই ঘুমোতে যাচ্ছেন।
অনিদ্রা : নিয়মিত দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে কর্মক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
ক্লান্তি ও তন্দ্রা : রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের ফলে দিনের বেলা ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম বা তন্দ্রাভাব দেখা দিতে পারে। যা কর্মজীবীদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ফলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
খিটখিটে মেজাজ : রাত জাগা ও অপর্যাপ্ত ঘুম মেজাজ খিটখিটে করে তোলে। ফলে বিরক্তি, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি : রাত জাগার অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী হলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকির বাড়ে।দিনের পর দিন রাত জাগার অভ্যাস শারীরিক ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাইতো কম বয়সেই মানুষের শরীরে দানা বাঁধছে নানা ধরনের রোগ। অভ্যাসের বদল কিন্তু এসব সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে।
ঘুমের সময় ঠিক রাখুন : প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে ঘুমান এবং ঘুম থেকে উঠুন। এমনকি ছুটির দিনেও এই চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। ঘুমানোর আগে ভারী কোনো কাজ করবেন না। যে ঘরে আপনি থাকেন, সে ঘরটিকেই ঘুমানোর জন্যই নিদিষ্ট করুন। চেষ্টা করুন আপনার শোবার ঘরে যেন টেলিভিশন না থাকে। শোবার ঘরের জানালায় রাখুন ভারী পর্দা। কারণ অন্ধকার আপনার চোখকে প্রশান্তি দেবে। এতে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। ঘুমানোর সময় বিছানার পাশে স্মার্টফোন রাখবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন স্ক্রল করা বাদ দিন।
ঘুমানোর প্রস্তুতি :ঘুমের আগে ভারী খাবার খাবেন না। ঘুমানোর ঘণ্টা দুয়েক আগে কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমবে। আবার ঘুমানোর আগে কম আলোতে পড়তে পারেন পছন্দের কোনো বই। মন শান্ত করতে গান শুনতে পারেন। এই বিষয়গুলো আপনার পেশিগুলোকে শান্ত করবে এবং আপনি ঘুমের জগতে তলিয়ে যেতে পারবেন সহজে। ঘুমানোর আগে কফি, চা পান করবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেডিটেশন করতে পারেন।
পরের দিনের প্রস্তুতি :রাতে ঘুমানোর আগে মনে মনে পরের দিনের কাজ ভেবে নিতে পারেন। এতে পরদিনের সকালের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। পরের দিন অফিসে গিয়ে কী করবেন তা ভেবে রাখতে পারেন। এতে আপনি অনেকটা হালকা বোধ করবেন। এরপর রুমের আলো নিভিয়ে যথাসম্ভব ঘর অন্ধকার করে ঘুমাতে যাবেন।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, স্লিপ ফাউন্ডেশন।