আর কয়েক ঘণ্টা পরই বেজে উঠবে
দামামা, শুরু হবে লড়াই। প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে
যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও
হবে। ৯ ভেন্যুতে ২০টি দলের ৫৫টি ম্যাচ হবে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ২ জুন
সকাল সাড়ে ৬টায় স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা
উঠবে বিশ্বকাপের নবম আসরের। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন স্টেডিয়ামে
লড়াই করবে কুড়ি দল।
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, ডালাস
ডালাসের
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামেই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ হবে। স্বাগতিক
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা প্রথম দিন মাঠে নামবে। সবমিলিয়ে এই মাঠে চারটি ম্যাচ
হবে। ডালাসের এই স্টেডিয়ামটি আগে কুইক ট্রিপ পার্ক নামে পরিচিত ছিল। এই
স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাগবি দল টেক্সাস
ইউনাইটেডের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পরবর্তীতে ২০২০ সালে
ইউএসএ ক্রিকেট বোর্ড এই মাঠটিকে নিজেদের করে নেয়। আনুমানিক ২০ মিলিয়ন ডলার
খরচ করে এটিকে ক্রিকেট মাঠে রূপ দেওয়া হয়েছে। গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে
প্রায় সাত হাজার দর্শক বসে খেলা দেখার সুযোগ পাবে। এই মাঠেই বাংলাদেশ
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি খেলবে। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।
সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক ও ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি স্টেডিয়াম, ফ্লোরিডা
সেন্ট্রাল
ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক স্টেডিয়াম, যা ফ্লোরিডা শহরে অবস্থিত। এই
স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে। যার দর্শক ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার।
স্টেডিয়ামটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৭০ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বকাপের চারটি ম্যাচ
হবে এই মাঠে। ১৫ জুন ভারত এই মাঠে লড়বে কানাডার বিপক্ষে।
নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নিউ ইয়র্ক
কিছুদিন
আগেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে নিউ ইয়র্কের নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
স্টেডিয়ামটির। পহেলা জুন ভারত ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে এর যাত্রা
শুরু হবে। এই ভেন্যুতে প্রায় ৩৪ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচটি নিউ ইয়র্কের এই ভেন্যুতেই। আগামী ১০ জুন দক্ষিণ
আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে মাঠে নামবে নাজমুল হোসেন
শান্তর দল। ভারত ও পাকিস্তানের মহারণও হবে এই ভেন্যুতে। যুক্তরাষ্ট্রে
অনুষ্ঠিতব্য ১৬ ম্যাচের ৮টিই হবে এই নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল
স্টেডিয়ামে। গ্রুপ পর্বে ভারতই একমাত্র দল যারা এক ভেন্যুতে তিনটি ম্যাচ
খেলছে। বিপুলসংখ্যক ভারতীয় প্রবাসী সমর্থকদের ভাবনায় রেখেই ভারতের বেশিরভাগ
ম্যাচ রাখা হয়েছে নিউ ইয়র্কে।
প্রোভিডেন্স স্টেডিয়াম, গায়ানা
২
জুন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে বাংলাদেশ সময় সকালে খেলবে স্বাগতিক
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। একই তারিখ রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানার
প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুখোমুখি হবে পাপুয়া
নিউগিনির। সবিমিলিয়ে বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচ হবে এখানে। অন্য ভেন্যুর তুলনায়
গায়ানার উইকেট কিছুটা স্লো হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই উপমহাদেশের দলগুলো
বাড়তি সুবিধা পাবে। এই স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার। গায়ানাতে
সুপার এইটের কোনও ম্যাচ না হলেও ২৭ জুনের দ্বিতীয় সেমিফাইনালটি হবে।
স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়াম, অ্যান্টিগা
অ্যান্টিগায়
স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে হবে বিশ্বকাপের আটটি ম্যাচ। ২০০৭ বিশ্বকাপ
সামনে রেখে তৈরি করা এই স্টেডিয়ামে এমনিতে দর্শক ধারণক্ষমতা ১০ হাজার হলেও
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ধারণ ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এই মাঠে ‘বি’
গ্রুপের চারটি ম্যাচ ছাড়াও সুপার এইট পর্বের চারটি ম্যাচ হবে।
কেনসিংটন ওভাল, ব্রিজটাউন
২০০৭
ওয়ানডে ও ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের ভেন্যু ছিল কেনসিংটন ওভাল।
এবারও এই মাঠেই হবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। ২৮ হাজার ধারণক্ষমতার কেনসিংটন
ওভালের যাত্রা শুরু হয় ১৮৭১ সালে। প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো এই স্টেডিয়ামের
একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ম্যালকম মার্শাল এবং জোয়েল গার্নারের মতো
সর্বকালের সেরাদের হোম গ্রাউন্ড এটি। এই ভেন্যুকে পিকউইক ক্রিকেট ক্লাব
নামেও ডাকা হয়। এই ভেন্যুর উইকেট কিছুটা বাউন্সি হয়ে থাকে। পেসারদের সুবিধা
থাকলেও এখানে ব্যাটারদের রান করা বেশ সহজ। ফাইনাল ছাড়াও গ্রুপ পর্বের
চারটি ম্যাচ এবং সুপার এইটের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই ভেন্যুতে।
ব্রায়ান লারা স্টেডিয়াম, ত্রিনিদাদ
ক্যারিবীয়
কিংবদন্তি ব্যাটার ব্রায়ান লারার সম্মানে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটির যাত্রা
শুরু ২০১৭ সালে। এটি কেবল স্টেডিয়াম নয়, পূর্ণাঙ্গ একটি স্পোর্টস
কমপ্লেক্সও। এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার। এই মাঠের পিচ হয়ে
উঠতে পারে ব্যাটারদের জন্য আদর্শ। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি ম্যাচের
তিনটিতেই আগে ব্যাট করা দল জিতেছে। বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালসহ এই মাঠে
মোট পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
আরনোস ভ্যালে গ্রাউন্ড, কিংসটন
১৯৮১
সালে যাত্রা শুরু করা এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ১৮ হাজার। এই স্টেডিয়ামে
বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এর বাইরে আরও
তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে।
ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়াম, সেন্ট লুসিয়া
সেন্ট
লুসিয়ায় এই স্টেডিয়ামটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির
নামানুসারে করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি
শিরোপা জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্যামি। তাকে বিশেষ সম্মান জানাতেই এই
স্টেডিয়ামের নামকরণ। ২০০২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই ক্রিকেট গ্রাউন্ডের
যাত্রা। এটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম স্টেডিয়াম, যেখানে ওয়ানডে ম্যাচ খেলা
হয়েছিল ফ্ল্যাডলাইটে। বিশ্বকাপে ছয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই ভেন্যুতে।