ধরা যাক, ক্যান্সার কিংবা অন্য কোনো গুরুতর সংক্রমণে
আক্রান্ত একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসক রোগীকে দেখে একটি ওষুধ আনতে
দিলেন। রোগীর স্বজন দ্রুত গিয়ে ওষুধটি নিয়ে এলেন। ওষুধটি খাওয়ানোর পরও
রোগীর কোনো উপকার হলো না, বরং রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেল কিংবা
মারাই গেল।
কারণ সেই ওষুধটি ছিল নকল। তাহলে এই মৃত্যু কি হত্যার
পর্যায়ভুক্ত হবে না? প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে নকল ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও
বিক্রির খবর আসছে। কিছু প্রস্তুতকারী কিংবা বিক্রেতা ধরাও পড়ছে। কিন্তু
মানুষ হত্যার অপরাধে তাদের শাস্তি হচ্ছে কি? না।
যত দূর জানা যায়, অতি
লঘু দ-েই তারা পার পেয়ে যায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত
শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের
যৌথ অভিযানে রাজধানী ঢাকার বাবুবাজার এলাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের
নকল ও নিবন্ধনহীন ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সন্ধান মিলেছে নকল
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ও খোলা কনডম প্যাকেটজাত করার কারখানার। নকল কিট ও
কনডম প্যাকেটজাত করার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই
চলে আসছে নকল-ভেজাল ওষুধের কারবার। বিভিন্ন বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের
অভিযানে অতীতে এমন অনেক ভেজালকারী কিংবা বিক্রেতা ধরা পড়েছে। গত এপ্রিল
মাসে এক অভিযানে দুই কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ জব্দ করা হয়েছিল। বিভিন্ন
সময়ে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আটা, ময়দা, রং ইত্যাদি মিশিয়ে ওষুধ তৈরি
করা হয়। এমনকি ইটের গুঁড়ার সঙ্গে নানা ধরনের রং ও কেমিক্যাল মিশিয়েও ওষুধ
বানানো হয়।
এগুলো খেলে রোগ তো সারেই না, বরং রোগীর লিভার ও কিডনি
মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রামে-গঞ্জে এ ধরনের ওষুধই নাকি বেশি বিক্রি
হয়। কারণ নকল ওষুধে বিক্রেতাদের লাভ হয় অনেক বেশি। শুধু মুখে খাওয়ার ওষুধই
নয় ইনহেলার, অয়েন্টমেন্ট বা ইনজেকশনের মতো ওষুধও নকল হচ্ছে। এমন উপাদান
দিয়ে ইনহেলার তৈরি হয়েছে, যা উপকার তো করবেই না, বরং মারাত্মক ক্ষতি করবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এমন কিছু কারখানার মালিককে কয়েক লাখ টাকা
জরিমানা করা হয় কিংবা কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হয়। নকল ওষুধ বানিয়ে বহু
মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো অপরাধ করার পর এটি কি খুবই লঘু
শাস্তি নয়? নকল ওষুধ তৈরি করে যারা কোটি টাকা উপার্জন করে, তাদের কয়েক লাখ
টাকা জরিমানা দিতে তো কোনো অসুবিধা নেই, বরং জরিমানা দিয়েই তারা আবারও একই
কাজে নেমে পড়ে।
শুধু নকল-ভেজাল ওষুধই নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ, মানহীন ওষুধের
ছড়াছড়িও কম নয়। এ ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যে ধরনের ভূমিকা থাকা
উচিত ছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য যে তা আমরা দেখতে পাই না। আমরা আশা করি, সরকার
এ ব্যাপারে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে মানুষের
জীবন নিয়ে খেলা করা এই দুর্বৃত্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।