স্যার
অ্যালেক্স ফার্গুসন এককথায় কিংবদন্তি কোচ। পেপ গুয়ার্দিওলাও কম নয় কারো
চেয়ে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে যে কীর্তি কেউ অতীতে গড়তে পারেননি, তা
এই স্প্যানিশ কোচ গড়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা
জিতে। দুই সময়ের এই দুই কোচের তুলনা প্রসঙ্গে সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ফরোয়ার্ড ওয়েইন রুনি এগিয়ে রাখলেন নিজের ‘গুরু’ ফার্গুসনকে।
বর্তমান
সময়ের কোচদের মধ্যে গুয়ার্দিওলার আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ খুব কমই।
সিটির হয়ে টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা জয়ের অকল্পনীয় কীর্তি তিনি গড়েন সদ্য
শেষ হওয়া মৌসুমে। ২০২২-২৩ মৌসুমে দলটিকে এনে দেন ঐতিহাসিক ট্রেবলের অভাবনীয়
স্বাদ। সব মিলিয়ে বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক কোচ সিটির দায়িত্বে
আট মৌসুমে জিতেছেন ছয়টি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ।
ফার্গুসনের হাত ধরে
ম্যানচেস্টারের আরেক দল ইউনাইটেড পথ চলেছে ২৬ বছর। এই সময়ে ১৩টি লিগ শিরোপা
উঠেছে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের দলটির শোকেসে। এর আগে স্কটিশ লিগের দল আবেরদিনের
দায়িত্বে ছিলেন ফার্গুসন; সেখানেও তিনি পেয়েছিলেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। রেয়াল
মাদ্রিদকে হারিয়ে আবেরদিনকে ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপও এনে দিয়েছিলেন
তিনি।
ইএসপিএন ব্রাসিলের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফার্গুসন ও গুয়ার্দিওলাকে
নিয়ে নিজের ভাবনা জানিয়েছেন রুনি, যিনি নিজেও এখন কোচ। কিংবদন্তি এই
ইউনাইটেড ফরোয়ার্ডের দৃষ্টিতে তার সাবেক ‘গুরু’ই এগিয়ে।
“দুজনের মধ্যে
কে ভালো তা নিয়ে অবশ্যই তর্ক থাকবে। কিন্তু আমার মনে হয়, ম্যানচেস্টার
ইউনাইটেডে স্যার অ্যালেক্স কী করেছিলেন, তা দেখতে ও জানতে মানুষ উন্মুখৃএবং
তিনি আবেরদিনে যা করেছিলেন, অবিশ্বাস্য।”
“এবং আপনি প্রশ্ন করতে
পারবেন? আবেরদিনের মতো একটা দলে গুয়ার্দিওলা কি সেটা করতে পারবেন (যেটা
স্যার অ্যালেক্স করেছিলেন)। প্রশ্ন থাকবে, বিতর্ক থাকবে, আমি মনে করি,
গুয়ার্দিওলা তার যুগে অবশ্যই সেরা এবং বিশ্বজুড়ে ফুটবল খেলার ধরন তিনি বদলে
দিয়েছেনৃকিন্তু হ্যাঁ, আমার কাছে স্যার অ্যালেক্স; এই খেলা থেকে তিনি যা
অর্জন করেছেন, অবিশ্বাস্য।”
ইউনাইটেডের হাল ধরার আগে স্কটিশ লিগের দল
আবেরদিনের দায়িত্বে ছিলেন ফার্গুসন। দীর্ঘদিন ধরে যে লিগে আধিপত্য ছিল
সেল্টিক ও রেঞ্জার্সের। তাদের দাপটের মধ্যেও আবেরদিনকে তিনটি লিগ ট্রফি এনে
দিয়েছিলেন ফার্গুসন। তার হাত ধরেই ১৯৮৩ সালে ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপে
রেয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করেছিল দলটি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের
সাফল্যের দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্য ফার্গুসনের (২টি) চেয়ে এগিয়ে গুয়ার্দিওলা
(৩টি)। এই তিনটির দুটি তিনি জিতেছিলেন বার্সেলোনার হয়ে, অন্যটি ইউনাইটেডের
নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী সিটির কোচ হিসেবে।
ইউনাইটেডে ক্যারিয়ারের সোনালি সময়
কাটিয়েছেন রুনি। ফার্গুসনের কোচিংয়ে খেলেছেন ৯টি বছর। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের
আঙিনা তিনি ছাড়েন সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে। ফার্গুসনের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই
তার শ্রদ্ধা বেশি। তবে গুয়ার্দিওলার প্রতিও রুনির মুগ্ধতা কম নয়।
এর আগে
একটি ফুটবল পডকাস্টে রুনি বলেছিলেন, গুয়ার্দিওলা তাকে সহকারী কোচ হতে
ডাকলে সাড়া দেবেন। গুয়ার্দিওলারই এক সময়ের সহকারী মিকেল আর্তেতা বর্তমানে
হাল ধরেছেন আর্সেনালের। এ প্রসঙ্গ টেনে রুনি বললেন, গুয়ার্দিওলা তার চোখে
সেরা ম্যানেজার।
“আপনারা দেখছেন, আর্তেতা (মিকেল) এখন আর্সেনালে কী করছে
এবং আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সে যা করছে তার অনেকাই শিখেছে গুয়ার্দিওলার
থেকে এবং এই বিষয়গুলো নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর।”
“আমার কাছে সেরা
ম্যানেজার পেপ এবং আপনিই দেখুন, তিনি কিভাবে মানিয়ে নিয়েছেন...সিটি এখন
কীভাবে খেলছে। চার বছর আগে তারা যেভাবে খেলত, সেইভাবে এখন খেলছে না তারা।”
বুটজোড়া
তুলে রাখার পর ২০০০ সালে ডার্বি কাউন্টির হয়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন
রুনি। আগামী মৌসুমে তিনি থাকবেন প্লাইমাউথের ডাগআউটে।