শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
১৩ পৌষ ১৪৩১
রবিবাসরীয়...
প্রকাশ: রোববার, ৯ জুন, ২০২৪, ১২:১৫ এএম আপডেট: ০৯.০৬.২০২৪ ১২:৩৬ এএম |

রবিবাসরীয়...











পূর্ণেন্দু যুগল


রবিবাসরীয়...আহমেদ সাব্বির ।।

শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ যুবক আমি। মধ্যবিত্ত হলেও আমরা উচ্চ মধ্যবিত্ত। তবে, করোনার আগ পর্যন্ত আমরা উচ্চ বিত্ত ছিলাম। মহামারীর কারণে বাবার ব্যবসায় কিছু লোকসান হয়। তবে, সাধারণ মধ্যবিত্তের কাছে তা তেমন লোকসান মনে না হলেও আমাদের কাছে তা ছিলো গুরুতর।
কারণ, এই লোকসানের ফলে আমরা এখন আর উচ্চবিত্ত নই। আমরা এখন উচ্চ মধ্যবিত্ত। তবে, বাবা আর আমি মিলে আমাদের পদোন্নতির চেষ্টা করছি।
এক সময় আমাদের ওঠাবসা ছিলো শহরের উচ্চবিত্তদের সাথে। এখন তা নেই। বরং, করোনার প্রকোপে আমাদের জীবন যাত্রার কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় দেশ সরকার কাঁপানো উচ্চবিত্তরা এখন আমাদের আর ফাংকশান আর পার্টিতে ডাকে না।
আমরাও তেমন কিছু মনে করি না।
যাই হউক এসব আবোলতাবোল না লিখে মোদ্দা কথায় আসি। কারণ, নরকে শাস্তির থেকে মুক্ত থাকার সময় খুব কম। বলতে পারেন, কয়েক ন্যানো সেকেন্ড। আমি বলি নি। নাটুন নামের কোন এক বিজ্ঞানী এসে আমায় বলে গেলেন।
শহরের পুঁজিবাদী মহলে আমাদের পদস্খলন  ঘটলেও আমার স্বভাবের পদস্খলন ঘটেনি।পরিবারের বাবার পরে কর্মক্ষম ও ব্যবসা সামলানোর মতো পুরুষ ছিলাম আমি। তাই আদরের পাশাপাশি টাকা খরচেরও কোনো বাঁধাধরা নিয়ম ছিলো না আমার।
উঠতি যুবক হিসেবে নিজের দেহের জোয়ার ভাটা সহজেই বুঝতে পারতাম। তাই সন্ধ্যা হলেই শহরের রেড লাইট এরিয়ায় আমার গাড়ি কাম নৃত্য শুরু করতো। ইংরেজিতে বললে ডান্সিং কার। মহামারীর সময় দেহের টান মেটানোর মতো সুযোগ ছিলো না। তাই, হাত আর ইন্টারনেটের ব্যবহারই বেশি হয়েছে।  
যাই হউক করোনার পর রিডেমশানের বসন্তে নতুন একটা যুবতী জোগাড়ে সক্ষম হলাম।
শহরের খানদানি বংশের মেয়ে। আমি দেখতে শুনতে খারাপ ছিলাম না। মরার আগ পর্যন্ত শহরের অনেক মেয়ে আমাকে দেখে কয়েকবার মরেছে। তবে, আমার যুবতীকে দেখে আমি কয়েকবার মরেছিলাম। বেশ লাস্যময়ী তার বদন। রেইন ফরেস্টের মতো রহস্যময়ী তার চোখ।
আপাতত নরক থেকে লিখছি। তাই বেশি বর্ণনা দিতে পারলাম না। দুঃখিত আজাদী পাঠকগণ। আবারও, মোদ্দা কথায় ফিরে আসি।
তো, আমার যুবতীর পূর্ণিমা আমাবস্যায় ঘুরে বেড়ানোর খুব শখ ছিলো। প্রায়শই সে বলতো,
- ঘুরাতে নিয়ে যাও না কেন, তুমি?
- যাবোতো। দেখছো না কত কাজ?
- রাখো তোমার কাজ।
- আহা! রাগ করছো কেন? বললাম না নিয়ে যাবো  
  ঘুরাতে।
- কবে যাবে?
- চলো কালকে যাই?
- হ্যাঁ চলো চলো।  
ছোট বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে উঠলো আমার যুবতী। তাকে বললাম একটা কালো শাড়ী আর হাতাকাটা ব্লাউজ পরে আসতে। তারপর, যথাসময়ে অফিস শেষ করে নিজের গাড়িতে ড্রাইভ করে তার বাসার সামনে আসলাম। অফিসে থাকতেই আমাকে ওয়্যাটসঅ্যাপে সে শাড়ি পরা একটা ছবি পাঠিয়েছিলো। ছবি দেখেই আমার জিহ্বা খুলে পড়ার জোগাড়। ছবিতেই যে এতো সুন্দর, পূর্ণিমার আলোয় তাকে কেমন দেখাবে।
অফিস থেকে বের হওয়ার সময় বাবা আমার ডাক দিলেন। কাছে ডেকে নিয়ে, কাঁধে হাত রেখে বললেন,
- কোথায় যাচ্ছো?
- এক বন্ধুর সাথে একটু কাজ আছেতো বাবা। তাই,    
মেরিন ড্রাইভের ওদিকে যাচ্ছি।
- আচ্ছা যাও, বাবা। সাবধানে ড্রাইভ করো। ঈশ্বর
-তোমায় রক্ষা করুন। আমেন।
- আমেন।
বাবার কথা শুনে হালকা হকচকিয়ে দিলাম। তবে, বুঝতে দিলাম না। তিনি কী বুঝতে পেরেছেন আমি কী করবো?
যাই হউক, বারবার কথা গুলিয়ে ফেলছি। আশা করি, আজাদী পাঠক বিরুক্ত হবেন না।
তো, যথাসময়ে তার বাসার সামনে এসে তাকে ওয়্যাটাঅ্যাপে নক দিলাম।
- জান, কই তুমি?
- তুমি কী এসে পড়ছো?
- হুম। তোমার বাসার নিচে।
- দাঁড়াও, জান। আসছি।
কিছুক্ষণের মধ্যে সে নেমে এলো। গাড়ির দরজা খুলে দিলাম। সে ভেতরে এসে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দেয়ার সময়ে খেয়াল করলাম তাদের এপার্টমেন্টের দাড়োয়ানটা আমার দিকে কেমন যেন আড়চোখে তাকিয়ে আছে। খানিকটা অস্বস্তি অনুভব করলাম। অফিস থেকে বের হওয়ার বাবার এ আচরণ, আবার তার উপর এ দাড়োয়ান। বিরক্তকর একটা অবস্থা।
আমার যুবতী বোধহয় আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছিলো। সে, শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার কপালের ঘামটা হালকা মুছে দিলো। সে নিজে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে আমাকে দিলো, তারপর নিজে একটা ধরালো। তাকে দেখে খানিকটা অবাক হলাম। সে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
- জান, গাড়ি স্টার্ট করো।
- আচ্ছা, জান।
আমিও আর ইতিউতি না ভেবে হাসিমুখে গাড়িটা স্টার্ট করলাম।
শহর থেকে আধঘন্টার দূরত্বে আমার বাবার একটা ছোটো খাটো গেস্ট হাউস রয়েছে। যেখান থেকে সমুদ্র দেখা যায়। আর বাসার গেট থেকে বের হলেই বিচ। অনেকটা নির্জন জায়গা। পেছনে ঝোপ জঙ্গল আছে। আর ঔ গেস্ট হাউসের চাবিটা আমার কাছেই থাকে।
রাস্তায় জ্যাম ছিলো। তাই, আধ ঘন্টার চেয়ে একটু বেশি লাগলো পৌঁছাতে। মেরিন ড্রাইভের রাস্তাটা ফাঁকা ছিলো। তাই, রাস্তায় উঠেই গাড়িটা গিয়ারটা উপরে তুলে দিয়ে গতিটা বাড়িয়ে দিলাম। মৃদুস্বরে গাড়ির স্পিকারে গান বাজছে। " যিবহ সু মঁরঃধৎ মবহঃষু ধিাবং",  জর্জ হ্যারিসনের সুরের মাদকতার সুরে রীতিমতো ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা। গতি আর গানের মাদকতায় খানিকটা সময়ের জন্য মত্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
ঠিক সে সময়ে, হঠাৎ করে একটা প্রকা- কালো কুকুর আমার গাড়ির সামনে এসে পড়লো। ব্রেক করার সময়টুকুও পেলাম না। গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে কুকুরটা রীতিমতো রক্তে দলাদলি হয়ে গেলো। আমি ও যুবতী দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে এলাম। দুজনেই হতভম্ব। কী থেকে কী হয়ে গেলো।
গাড়ি ডিক্কি থেকে পানির বোতল ও কাপড় নিয়ে এসে কুকুরটাকে রাস্তার পাশের ঝোপে রেখে দিয়ে আসলাম। লাশটাকে সরাতে গিয়ে আমার শার্টে ভালোই রক্ত লেগে গেলো। শার্টটাকে কোনোরকমে পরিষ্কার করে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলাম। মনের বিক্ষিপ্তভাব সরাতে দুজনেই একটা একটা করে সিগারেট ধরালাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা গেস্ট হাউসে পৌঁছে গেলাম। যুবতীকে বাইরে রেখে আমি গাড়িটা বিচেই পার্ক করলাম।
পকেট থেকে চাবি বের করে গেস্ট হাউসটা খুলতেই যাবো, এমন সময় যুবতী বললো,
- আচ্ছা, আমরা বিচে বসি না? ভেতরে ঢুকার দরকার কী?
- ঠিক আছে, তুমি যেমন বলো। দাঁড়াও, আমি ফ্রীজ থেকে দুইটা বিয়ারের ক্যান নিয়ে আসি।
- তুমি খাও। আমি খাবো না।
- আরে, খেয়ে দেখো না। ভালো জিনিস।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আনো।
ফ্রীজ থেকে দুইটা বিয়ার নিয়ে আমরা বিচে বসলাম। ক্যান খোলার শব্দে সমুদ্রের পবিত্র নিরবতা হয়তো কিছুটা ভঙ্গ হলো। আমরা দুজন দুজনের দিকে তাকালাম। কোনো কথা নেই। চারিদিন যেনো সিন্ধুর পবিত্রতায় ডুবে আছে। কেমন সম্মোহনী তার দৃষ্টি। চোখগুলো যেন কাছে ডাকছে। আমি আলতো করে তার হাতটা ধরলাম।
সেও আমার কাছে এসে বসলো।
- দেখছো জান, চাঁদ আর সমুদ্র যেন আজ একাকার হয়ে গেছে।
- হ্যাঁ জান। সবকিছুই সুন্দর, যদি তুমিও থাকো পাশে।  
যুবতী কিছুটা মুচকি হাসলো। তাকে জড়িয়ে ধরলাম। সেও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তখন আমি দেহের সমুদ্রের উত্তাল হাওয়া যুবতীর ভেতর অনুভব করলাম। হয়তো যুবতীও অনুভব করতে পেরেছিলো। আমরা আরেকটু কাছে এসে বসলাম।
- কী জান?
- কিছু না।
- এভাবে তাকিয়ে আছো যে।
- তোমায় কী দেখতেও পারবো না।
- দেখো। প্রাণ ভরে দেখো। যতক্ষণ সমুদ্র শুকিয়ে না যায়, ততক্ষণ দেখো।
এইসব কথাবার্তার মাঝেই আমাদের ফ্রয়েডীয় ক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো। আমরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়লাম। যেন মনে হলো সমুদ্রের এই পৃথিবীতে আমরাই এডাম এবং ইভ। ফসলের মাঠ যেমন বৃষ্টির পানিকে শুষে নেয়, আমরাও একে অপরকে শুষে নিলাম। মনে হলো ওল্ড রামের সাথে সোডা মিশে বহুদিনের তৃষ্ণা ভিজিয়ে দিয়ে গেলো।
তারপর আমরা আলাদা হলাম। ক্লান্তি ভর করলো দুজনার দেহে।  যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত সৈনিক যেন ডেরায় ফিরে এলো।
কানে ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন। চারিদিকে নিরবতা। দেহ ছুঁয়ে যাচ্ছে ধারালো বাতাস। আমি ও যুবতী শুয়ে আছি। অনেকটা নগ্ন আমরা। দুজনেই দুজনার আদিম প্রবৃত্তিতে ফিরে গেছি।
আমরা হাত ধরে বালুর উপর শুয়ে আছি। ছোট ছোট নিঃশ্বাস ফেলছে যুবতী। হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। আমারও চোখের পাতা নেমে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুমের মধ্যেই বুঝতে পারছি সিন্ধু পবন ব্লেডের মতো ছুঁয়ে যাচ্ছে।
এই এক ঘন্টা হবে। ঠিক মনে নেই। একটা চাপা গোঙ্গানির শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। চোখে খুলে দেখলাম যুবতী বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ঘামে ভেজা তার শরীর। আমি ধরফর করে উঠে বসলাম। শরীর নীল হয়ে গেছে। চোখে মুখ ফুলে উঠেছে। যুবতীকে হালকা ঝাঁকুনি দিলাম।
- এই জান, কী হয়েছে তোমার?
- ক্সক্সক্সক্সক্সক্স
- কথা বলছো না কেন?
সে আবারও বড় একটা নিঃশ্বাস নিলো। ব্যাঙ্গের মতো ফুলে উঠেছে তার গলা। তার মুখ দিয়ে গোঙ্গানির মতো শব্দ বের হচ্ছে। সে বোধহয় কিছু বলার চেষ্টা করছে।
- হ্যাঁ জান। বলো, বলো।
- আমার পেট দারুন ব্যাথা করছে।
- আর কিছু হচ্ছে।
সে কষে আমায় একটা চড় দিলো।
- কী জান, মারলে কেন? কী হয়েছে।
- দেখছিস না শালা, কী হয়েছে? ব্যাথায় আমি এখানে মরে যাচ্ছি। আর, উনি এখানে পিরিতি মারাচ্ছেন।
সে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। চাপা আর্তনাদে বাতায় ভারী হয়ে আসছে। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।
প্যান্টটা পড়ে দ্রুত ঘরের ভিতর গেলাম। তন্ন তন্ন করে পুরো বাড়ি খুঁজলাম। কোথাও পেইন কিলার পেলাম না। নিজেকে নিজেকে থাপড়াতে ইচ্ছে করছে। এতোটা বলদ আমি কীভাবে হতে পারি। বাহিরে কী হচ্ছে দেখার জন্য ঘর থেকে বের হলাম। দূর থেকে যা দেখলাম, বমি করার মতো অবস্থা আমার। একবার বমিও করে দিলাম।
যুবতীর পুরো দেহ নীল হয়ে গেছে। পেট ফুলে পুরো ড্রাম। মাথায় বাজে বাজে খেয়াল আসতে লাগলো। সেসব লাথি মেরে দ্রুত তার কাছে গেলাম। চোখ সাদা হয়ে গেছে। ক্রমশ ব্যাঙের মতো উঠানামা করছে তার গলা। সারা দেহে কালো শিরা ভেসে উঠেছে। নীল রঙের মাঝে তা যেন স্পষ্টমান। কি করবো বুঝতে পারছি না। খানিকটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। কাছে বসে একজন মানুষ কাঁতরাচ্ছে, গোঙাচ্ছে অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না। খুব অসহায় মনে হলো নিজেকে।
তবে পরক্ষণেই অসহায় ভাব কেটে গেলো। অসহায়ত্বের উপর ভর করলো ভয়। যুবতীর পেটটা এমন ফুলে উঠলো যে, যেকোনো সময় ফেটে যাবে এবং মিনিট খানেক পর ফেটেও গেলো। মনে হলো একটা ল্যান্ড মাইন ফেটেছে। রক্ত আর নারি ভূরি সব আমার মুখে এসে পড়লো। আরেক দফা বমি হলো আমার। মনে হলো আমার নিজের নারি ভূরি সব বেরিয়ে আসবে।
তারপর কিছুক্ষণের জন্য আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। এই সময়ে মধ্য কী হলো আমার মনে নেই। তবে, জ্ঞান ফেরার পর যা দেখলাম নিজের চোখ নিজে খামচে নিতে ইচ্ছে করছিলো। একটা বড়, লম্বা আকৃতির, লোমশ প্রাণী খুবলে খাচ্ছে যুবতীর দেহ। তার নখগুলো আনুমানিক ছয় ইঞ্চি হবে। উবু হয়ে বসে যুবতীর দেহকে মুরগীর কিমার মতো গিলে খাচ্ছে। যেন হাজার বছরের ক্ষুধার্ত সে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। ঢোক গিললাম।
হয়তো আমার ঢোল গিলার শব্দ তার কানে বেজেছিলো। সে ঘাড় পুরোটা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি এক কদম পিছে সরলাম। রক্তে তার মুখ লাল হয়ে আছে। বড় বড় দাঁত বের করে সে একটা পৈশাচিক হাসি দিলো। অন্ধকারের মতো মুখের রং।  ডাগর চোখ জোড়া যেন নেকড়ের চোখের মতো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে উঠলো। আমার শিরদাড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। যেন বরফ হয়ে গেছে আমার ২০৬ টা হাঁড়। আমার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে সে দেহ ভোগের দিকে আবার মনোযোগ দিলো। যুবতীর অনুভূতিহীন চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যেন সাহায্য চাইছে প্রতিটি আঁচড়ে, প্রতিটি কামড়ে। আর এদিকে ঔ কুৎসিত প্রাণীটা নিজের ফিস্ট চালিয়ে যাচ্ছে। নেকড়ে যেমন তার শিকারকে আধখাওয়া রেখে যায় তেমনি প্রাণীটাও তার যুবতীর দেহকে আধখাওয়া খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।
যখন সে উঠে দাঁড়ালো, মনে হলো আনুমানিক বারো ফুটের একটা দানব দাঁড়িয়ে আছে। প্রাগৈতিহাসিক মানবের আদি প্রতিচ্ছায়া তার বদনে স্পষ্ট। অন্ধকারের মুখোশ তার মুখে।
কিন্তু, ক্রমশই তার মুখ বদলে যেতে লাগলো। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট হয়ে উঠলো তার মুখ। তার মুখ দেখার পর আমার চোয়াল হা হয়ে গেলো। থ হয়ে গেলাম কতক্ষণের জন্য। অবিকল আমারই মুখ। তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তামাশার হাসি তার মুখে। আমার বিবেক যেনো আমাকেই বিদ্রুপ করছে।
তারপর, দুহাত সে উপরে তুললো। মাথা উপরে তুলে সে পশুর মতো হুংকার দিতে লাগলো। হুংকারের সাথে সাথে বিস্ফোরিত হতে লাগলো তার দেহ। আর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিটিয়ে পড়তে লাগলো সমুদ্র তটে।
তখন আমি পুরোপুরি পাথরের মূর্তির মতো সবকিছু দেখছি। যুবতীর নিথর দেহ পড়ে আছে সমুদ্র তটে। আর, আমি অসহায় পাথরের মতো সবকিছু দেখছি।
সমুদ্রও যেন হুংকার দিতে লাগলো। কয়েকটা বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়লো। আর ধুয়ে নিয়ে গেলো তার বদনের ধ্বংসাবশেষ। তারপর, আবারও আমি অজ্ঞান হলাম।
এই বলে তিনি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে উপরের দিকে দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমি একজন অপরাধ সাংবাদিক। আজ মেন্টাল অ্যাসাইলামে এসেছিলাম শহরের নামী ব্যবসায়ী জোসেফ ক্রলির সাক্ষাৎকার নিতে। আমার সাথে কথা বলতে বলতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তার প্রেমিকার খুনের অপরাধের দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। সাজার কয়েকবছর যেতেই তার নানারকম মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তারপর থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন। তার কাছ থেকে গল্প শুনতে শুনতে আমার নিজের বিবেকও যেন একটা ধাক্কা খেলো। সত্যি এই পৃথিবীতে আমরা আইন কানুন কে ফাঁকি দিয়ে নানারকম পাপ করি। কিন্তু, বিবেকের দংশনের কথা বেমালুম ভুলে যাই। ছোট বেলায় মায়ের কাছ থেকে বাইবেল শুনতাম। মা সবসময় একটা লাইন বারবার বলতেন।
"কেননা পাপের বেতন মৃত্যু ; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রিষ্টেতে অনন্ত জীবন। "
রোমিও : ৬ অধ্যায় : ২৩ পদ













সর্বশেষ সংবাদ
২৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা মহানগর বিএনপির প্রথম সম্মেলন
কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এর মামলা
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
দেড় কোটি টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দীর্ঘ তের বছর পর ২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
কুমিল্লা আসছেন সিইসি
এক দফা দাবি আদায়ে কুমিল্লা মেডিকেলে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি
মাস্টারের প্রতি ক্ষোভের জের ধরেই জাহাজে সাত খুন
খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের আসামি বিপ্লব আটক
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২