সরকারি,
স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি
নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া
রায় স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ। আগামী ৪ জুলাই আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এ
আপিল আবেদনের শুনানি হবে। রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম
ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল থাকবে
বলেছেন আইনজীবীরা।
আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মোতাহার হোসেন সাজু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
সকালে
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়
স্থগিতের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। দুপুরের পরে এ আবেদনের শুনানি হয়।
স্বাধীনতার
পরপরই সংবিধান হওয়ার আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা
আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ৩০ শতাংশ কোটা প্রবর্তন
করা হয়। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পূর্ববর্তী সব
কার্যক্রমের বৈধতা দেওয়া হয়।
সরকার পরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরও কোটা সুবিধার আওতায় আনে।
শিক্ষার্থীদের
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা
পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও
বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০
শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি বাতিল হয় ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটাও।
তবে
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির
পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই
পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে
২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়।
রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
চূড়ান্ত
শুনানি শেষে গত রুল অ্যাবসলিউট বা যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি কে এম
কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এর ফলে সরকারি
দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে
চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড মুক্তিযোদ্ধা কোটা
বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ হয়ে গেছে।
আদালতের এই আদেশের প্রতিক্রিয়ায়
সেদিন সন্ধ্যাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে। তারা
আবার আন্দোলনের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন।
রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো
বিক্ষোভ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা জুন মাসের মধ্যে কোটা বাতিল
করা না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে
মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী
নওফেল। শনিবার চট্টগ্রামে এক আয়োজনে তিনি বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর
এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটার প্রশ্নে কিছু মানুষের যে এত উষ্মা-
এটা আসলে আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।
“আমাদের দেশ যারা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা দ্বিতীয়বার যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় কোনো আলোচনার মাধ্যমে, সেটা কাম্য নয়।”