ঐতিহ্যবাহী মুদাফরগঞ্জ বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দীর্ঘ ৬২ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন শেষে রাজকীয় বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে মাওলানা মোঃ সামছুল হককে। সংবর্ধনা শেষে ক্রেস্ট, ফুলের মালা, নগদ তিন লাখ টাকা, ফুলের তোড়া, নানা ধরনের উপহার সামগ্রীসহ মুসুল্লিদের প্রিয় বড় হুজুরকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে পাশাপুরে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেন মুসুল্লিরা। অভূতপূর্ব এই আয়োজনে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে লাকসাম উপজেলার মুদাফরগঞ্জ বাজারে অবস্থিত মসজিদের দ্বিতীয় তলায় সংবর্ধনা সভা শেষে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে মুসুল্লিদের প্রিয় বড় হুজুর মাওলানা মোঃ সামছুল হককে বিদায়ী সংবর্ধনা দেন মসজিদে নামাজ আদায়কারী প্রবাসী ও স্থানীয় মুসুল্লিরা।
জানা যায়, ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক মুদাফরগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ইমাম হিসেবে যোগ দেন ওই সময়ের টগবগে তরুণ আল্লামা মাওলানা সামছুল হক। বর্তমানে তাঁর বয়স ১০৯ বছর। তিনি একাধারে ওই মসজিদে ইমামতি ছাড়াও খতিব হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
কিন্তু দীর্ঘ ৬২ বছর ইমামতি করার পর বয়সের কারণে তিনি ২০১৪ সালে অবসরে যান। মুদাফরগঞ্জ বাজার কমিটি ও প্রবাসীদের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার তাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়
মুদাফরগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম তুহিনের সভাপতিত্বে ও মুফতী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুতালিবের পরিচালনায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন মুদাফরগঞ্জ এই.উ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও মুদাফরগঞ্জ বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের বর্তমান খতিব মাওলানা মুফতি আব্দুল ওয়াদুদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ আজিজুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুদাফরগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আবু আহমদ তালুকদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন তালুকদার, মুফতি আহসান হাবীব, বর্তমান পেশ ইমাম আব্দুল মুবিন।
অনুষ্ঠান সহযোগিতায় ছিলেন এস.এম. হিরন পাটোয়ারী, আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, ইকবাল হোসাইন, মোঃ রবি মজুমদার, শাহজালাল আবেদি প্রমুখ।
এ সময় বৃষ্টি উপেক্ষা করে নানা বয়সী মুসুল্লিরা প্রিয় বড় হুজুরের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ৬২ বছর মাওলানা মোঃ সামছুল হক এ মসজিদে ইমামতি ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা ও বিভিন্ন মাহফিলে বয়ান করতেন। স্থানীয় মুসুল্লি, বাজারের ব্যবসায়ী ও মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করে তিল তিল করে বিশাল এ মসজিদ গড়ে তোলেন। কিন্তু কখনো কমিশন নেননি। তিনি যে অবস্থানে ছিলেন, ইচ্ছে করলে তিনি অঢেল টাকা বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই মুসুল্লিদের পক্ষ থেকে প্রিয় ইমামকে তিন লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে সম্মানীর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও মসজিদে হুজুরের জন্য একটি কামরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন এ মসজিদের দরজা তাঁর জন্য খোলা থাকবে।
এদিকে, সংবর্ধনার জবাবে বিদায়ী খতিব মাওলানা মোঃ সামছুল হক প্রত্যাশা করেন, ছোটরা বড়দের সম্মান করবে আর বড়রা ছোটদের স্নেহ করবে। আর সবাই নিঃস্বার্থভাবে মসজিদের খেদমত করবে।