মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
৬ কার্তিক ১৪৩১
রবিবাসরীয়..
প্রকাশ: রোববার, ৩০ জুন, ২০২৪, ১:১১ এএম |

রবিবাসরীয়..











বাংলাদেশের সাহিত্যে লিটলম্যাগঃ
একটি চকিত জরিপ



রবিবাসরীয়..আলমগীর মোহাম্মদ ।।

“যদি আমি  লেখক হয়ে থাকি, তা ক'রেছে লিটলম্যাগ।”  সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৩- ২০০৫) এর  উপরোক্ত উদ্বৃতি বাংলা সাহিত্যে লিটলম্যাগের গুরুত্বের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। ঊনিশ  শতকে ব্রিটিশ অধীন ভারতে ছাপাখানার যাত্রা শুরুর পর সাময়িকপত্র বা লিটলম্যাগের সূচনা ঘটে। মূল ধারার সাহিত্যে, মূলত উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বেশকিছু সাড়াজাগানো লিটলম্যাগের আবির্ভাব ঘটে। অক্ষয় কুমার দত্তের সম্পাদনায় ‘বিদ্যাদর্শন’ (১৮৪২), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ‘বঙ্গদর্শন’ (১৮৭২), প্রেমেন্দ্র মিত্রের সম্পাদনায় ‘প্রবাসী’ (১৯০১) , প্রম্থ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘সবুজপত্র’ (১৯১৪), ও দীনেশরঞ্জন দাশ সম্পাদিত ‘কল্লোল’ (১৯২৩) এক্ষেত্রে পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত। আরো কিছু উল্লেখযোগ্য পত্রিকার নাম করতে গেলে 'কালি- কলম’ ও ‘বিচিত্রা’ ও ‘প্রবাসী'র’   নাম  অবশ্যই নিতে হয়।  কাছাকাছি সময়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত  ‘শিখা’ পত্রিকাও উল্লেখের দাবি রাখে। একই শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতাকেন্দ্রিক বেশকিছু পত্রিকার উপস্থিতিও পাওয়া যায়। এর মধ্যে শিব নারায়ণ রায়ের ‘জিজ্ঞাসা’, ও সুনীলের ‘কৃত্তিবাস’ উল্লেখযোগ্য।
ব্রিটিশ রাজের বিদায়ের পর পাকিস্তানকালে প্রকাশিত কয়েকটি  প্রভাবশালী পত্রিকার মধ্যে সিকান্দার আবু জাফরের সম্পাদনায় ‘সমকাল’, আর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সম্পাদনায় ‘কণ্ঠস্বর’,  ও আহমদ ছফার সম্পাদনায় ‘স্বদেশ’ উল্লেখযোগ্য । স্বাধীনতার পর  বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক লিটল ম্যাগের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয়, এমনকি জেলা শহর থেকেও লিটলম্যাগ প্রকাশিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলা একাডেমি বই মেলায় লিটলম্যাগের জন্যে আলাদা চত্ত্বর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ থেকে আমাদের লিটলম্যাগের পাঠকপ্রিয়তা, প্রকাশনার বিপুলতা ও বৈচিত্র্য আঁচ করা যায়। এই সময়ে প্রকাশিত লিটলম্যাগের মধ্যে ‘লিরিক’, ‘চর্যাপদ’, ‘নিরীখ’, ‘ঘুংঘুর’,  ‘তত্ত্বতালাশ’, ‘মননরেখা’, ‘শালুক’, ‘যোগাযোগ’,  ‘অরণিকা’,  ‘নিরন্তর’, এবং  ‘নান্দীপাঠ’ ইত্যাদির নাম করা যায় ।এই নিবন্ধে  আমরা উপরে উল্লেখিত লিটলম্যাগগুলো ও তাদের বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া প্রকাশিত লিটলম্যাগের বিষয়বস্তু,  ধরন ও প্রকাশনার বৈচিত্র্য ও বর্তমান বাংলাদেশের সাহিত্যে তাদের  অবস্থান পরিস্কার করার চেষ্টা করব।  
“খরঃঃষব গধমধুরহব রং ধ ষরঃবৎধৎু ঁংঁধষষু হড়হপড়সসবৎপরধষ সধমধুরহব ঃযধঃ ভবধঃঁৎবং ড়িৎশং বংঢ়বপরধষষু ড়ভ ৎিরঃবৎং যিড় ধৎব হড়ঃ বিষষ শহড়হি.” (২০১০:  ৮৫০). লিটলম্যাগের উপরোক্ত সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে বলা যায় এটা মূলত অবাণিজ্যিক সাহিত্য সাময়িকী যা সাহিত্যের প্রসারে ভূমিকা পালন করবে এবং অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত বা অপরিচিত লেখকদেরকে লেখা প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকের সাথে তাঁদের  পরিচয় ঘটাইয় এবং লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ  করে । বহু বছর আগে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় “বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন” প্রবন্ধে বলেছিলেনঃ  
“টাকার জন্য লিখিবেন না। ইউরোপে এখন অনেক লোক টাকার জন্যই লেখে, এবং টাকাও পায়; লেখাও ভাল হয়। কিন্তু আমাদের এখনও সেদিন হয় নাই। এখন অর্থের উদ্দেশ্যে লিখিতে গেলে, লোক-রঞ্জন-প্রবৃত্তি প্রবল হইয়া পড়ে। এখন আমাদিগের দেশের সাধারণ পাঠকের রুচি ও শিক্ষা বিবেচনা করিয়া লোক-রঞ্জন করিতে গেলে রচনা বিকৃত ও অনিষ্টকর হইয়া উঠে।” (২০২২ঃ ১৫)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপরিল্লিখিত পরামর্শ বাংলাদেশের অধিকাংশ লিটলম্যাগ অনুসরণ করে ব’লে আমরা মনে করি। এই নিবন্ধে আমরা পাঠকের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করব কিভাবে ব্যক্তিপর্যায়ে, কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লিটলম্যাগ দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে এবং বাংলাদেশের   সাহিত্যে তারা কী  অবদান রেখেছে।  লিটল ম্যাগ সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসুর মতামত ছিল এরকমঃ
“কৃতিত্ব যেটুকুই হোক, অন্ততপক্ষে নজর যাদের উঁচুর দিকে, তাদের জন্য নতুন একটি নাম বেরিয়েছে মার্কিন দেশে : চলতি কালের ইংরেজি বুলিতে এদের বলা হয়ে থাকে লিটল ম্যাগাজিন। লিটল কেন? আকারে ছোট বলে? নাকি বেশিদিন বাঁচে না বলে? সব কটাই সত্য, কিন্তু এগুলোই সব কথা নয়; ঐ ছোট বিশেষণটাতে আরো অনেকখানি অর্থ পোরা আছে। প্রথমত, কথাটা একটা প্রতিবাদ, এক জোড়া মলাটের মধ্যে সবকিছু আমদানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। লিটল ম্যাগাজিন বললেই বোঝা গেল যে জনপ্রিয়তার কলঙ্ক একে কখনো ছোঁবে না, নগদ মূল্যে বড়বাজারে বিকোবে না কোনোদিন, কিন্তু হয়তো একদিন এর একটি পুরনো সংখ্যার জন্য গুণীসমাজে উৎসুকতা জেগে উঠবে। সেটা সম্ভব হবে এজন্যই যে, এটি কখনো মন যোগাতে চায়নি, মনকে জাগাতে চেয়েছিল। চেয়েছিল নতুন সুরে নতুন কথা বলতে। কোনো এক সন্ধিক্ষণে যখন গতানুগতিকতা থেকে অব্যাহতির পথ দেখা যাচ্ছে না, তখন সাহিত্যের ক্লান্ত শিরায় তরুণ রক্ত বইয়ে দিয়েছিল – নিন্দা নির্যাতন বা ধনক্ষয়ে প্রতিহত না হয়ে। এই সাহস, নিষ্ঠা, গতির একমুখিতা, সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা- এটাই লিটল ম্যাগাজিনের কুলধর্ম।” ( ২০১৭ঃ  ১)

বাংলাদেশের সাহিত্যে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য লিটলম্যাগ হলোঃ প্রবাসী লেখক হুমায়ুন কবির সম্পাদিত ‘ঘুংঘুর’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী সম্পাদিত ‘নিরিখ’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম সম্পাদিত ‘তত্ত্বতালাশ’, মিজানুর রহমান সম্পাদিত ‘মননরেখা’, ফাহমিদুল হক ও আল মামুনের সম্পাদনায় ‘যোগাযোগ’, মোহাম্মদ  শাকেরউল্লাহ সম্পাদিত  ‘ঊষালোক’ ,আহমাদ মাযহার সম্পাদিত ‘বইয়ের জগত’ ইত্যাদি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও খ্যাতিমান গবেষক মোহাম্মদ আজম সম্পাদিত তত্ত্বতালাশ  একটি ভিন্নধর্মী সাময়িকী। প্রকাশনার সংখ্যাগত দিক থেকে নবীন এই পত্রিকা তুলনামূলকভাবে  বেশি পাঠকনন্দিত ও বহুল প্রচার পেয়েছে। কলা ও সমাজবিদ্যার তুলনামূলক সাহিত্যধর্মী অংশের প্রাধান্য থাকলেও গণিত ও আইন বিষয়ে লেখা প্রবন্ধের উপস্থিতি পাওয়া যায় এই পত্রিকায়। তত্ত্বতালাশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পাদকের বক্তব্য এরকমঃ
“জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ ও সামষ্টিক কান্ডজ্ঞানের জন্যে একাডেমিক স্কীল থাকা জরুরী। তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন জ্ঞান পয়দা করে নয়া বলে আমরা খবর পাই, আর অন্যের বিদ্যা বিতরণেও তেমন মুনসিয়ানার কোন সংবাদ পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় আমাদের পেশাজগতে কুশলী মানুষের অকাল সামাজিকভাবে আমরা যে গালগল্প, টুকর মন্তব্য, আঁতকা মত এবং ‘আমার মনে হয়’-ধরণের সংস্কৃতিতে আমূল ডুবে আছি, তার পটভূমি হয়ত চূড়ান্ত বিচারে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলর গরিবি।” ( ২০২১ঃ ০৪)
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গরিবি হাল’ থেকে মুক্তি পেতে হলে দরকার জ্ঞানের চর্চা ও সৃজনের প্রয়াস। সেটা ব্যক্তি উদ্যোগে হোক , বা সামষ্টিক কোন প্রয়াসে হোক। তত্ত্বতালাশ সেই কাজটাই হাতে নিয়ে নিয়েছে  ব’লে আমরা মনে করি। সম্পাদক আরো বলছেন;  
“এ অবস্থা মোকাবেলা করা তত্ত্বতালাশের কাজ নয়। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চার মানোন্নয়নই একমাত্র পথ। আমরা অবশ্যই মাঝেমধ্যে নানান উপায়ে মনে করিয়ে দিতে পারি, যা ঘটা দরকার তা ঘটছে না। সেটাও কম কথা নয়।” (২০২১ঃ ০৫)
“তত্ত্বতালাশ” দ্বিতীয় সংখ্যা, অক্টোবর ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাগুলোর দিকে তাকালে অনুমান করা যায় কেন পত্রিকা অল্প সময়ে বহুল পাঠকপ্রিয়তা ও প্রচার পেয়েছে। গণিত, রাজনীতি, সমাজবিদ্যা, সিনেমা ও করোনা বিষয়ে সুনিপুণ গবেষণা ও আলাপ উঠে এসেছে। ফাহমিদুল হক ‘চলচ্চিত্রের- তত্ত্বের আদি- পর্ব’ প্রবন্ধে একাডেমিক এলাকায় চলচ্চিত্র সমালোচনা ও তত্ত্ব বিকশিত হওয়ার পূর্ব পর্বের পরিচয় পাওয়া যায়। “আহমদ ছফার বাঙ্গালী মুসলমানের মন’ঃ বাঙ্গালী মুসলমানের ইতিহাস প্রণয়নের সংকট” মূলত ছফার প্রবন্ধের একটি নিবিড় পাঠ। বাঙালি মুসলমান নিয়ে প্রভাবশালী লেখকদের বয়ানে নানারকম মিথ চালু আছে। এদের অধিকাংশই মনগড়া ও অতিসাধারণকৃত। অধ্যাপক আজম এই প্রবন্ধে ছফার উল্লেখিত প্রবন্ধের ত্রুটি বিচ্যুতি, ঐতিহাসিক- কল্পনার অস্পষ্টতা তুলে ধরেছেন।  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী সম্পাদিত ‘নিরিখ’ সমাজ ও শিল্প বিষয়ক একটি সাময়িকী। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। শিল্প ও সমাজ বিষয়ক এই সাময়িকী বৈচিত্র্যময় প্রবন্ধের এক সমাহার। প্রকাশনার পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে  নিরিখ কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। প্রথম সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিলঃ “বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশের সাহিত্য। “নিরীখ” মনে করেঃ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলা। বাংলা সাহিত্য প্রধান সাহিত্য হলেও একমাত্র নয়। প্রান্তীয়, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে আলাদা জনগোষ্ঠীর ভাষা, আদিবাসীদের স্বতন্ত্র ভাষা, ক্ষীণকায় উর্দু ভাষার সাহিত্যও বাংলাদেশে প্রবহমান।” (২০০৭ঃ ২ )    
বিষয় বৈচিত্র্যময়তা  ‘নিরিখ’ এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। করোনা  মহামারীর ভয়াল থাবা জয় করে  পৃথিবী নিউনরমালে এগিয়ে যাক সেই প্রত্যাশা আছে বর্ষ ১৪, সংখ্যা ১৩, জুন ২০২১- এ প্রকাশিত সংখ্যার সম্পাদকীয়তে।
“আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে   
আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে
আমাদের দেখা হোক জীবাণূ ঘুমালে
আমাদের দেখা হোক সবুজ সকালে।” ( ২০২১ঃ ১)
এ সংখ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ হল  ‘বাংলাদেশের উপন্যাসে অপারেশন সার্চলাইট ও বঙ্গবন্ধু।  এ প্রবন্ধের  নুর সালমা খাতুন দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একসূত্রে  গাঁথা। দীর্ঘ শোষণ  ও বঞ্চনার শেকল মাড়িয়ে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভ করে। একাত্তর সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত ও নিরীহ বাঙ্গালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নির্বিচারে হত্যা করেছিল এদেশের হাজার হাজার নিরীহ জনগণকে।
“ ওহ ঃযব ষরঃবৎধঃঁৎব ড়ভ ধহু ধমব ঃযবৎব ধৎব মবহবৎধষষু ভড়ঁহফ ঃড়ি ফরংঃরহপঃ ঃবহফবহপরবং. ঞযব ভরৎংঃ বীঢ়ৎবংংবং ঃযব ফড়সরহধহঃ ংঢ়রৎরঃ ড়ভ ঃযব ঃরসবং; ঃযব ংবপড়হফ, ঃযব ংবপৎবঃ ড়ৎ ধহ ড়ঢ়বহ ৎবনবষষরড়হ.’’ ( ডরষষরধস ঔ. খড়হম, ঢ়. ৮৮)

বাংলাদেশের উপন্যাসে একাত্তরের নৃশংস ঘটনার বর্ণ্না ও বঙ্গন্ধুর অবদানের কথা পরিস্কারভাবে  উঠে এসেছে। আনোয়ার পাশা’র রাইফেল, রোটি, আওরাত, মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন, খেলাঘর, অশরীরী, শওকত আলীর যাত্রা, শওকত ওসমানের জাহান্নম হইতে বিদায়, রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা, রাবেয়া খাতুনের ফেরারী সূর্য  উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু ও অপারেশন সার্চলাইটের নিরেট বণর্না পাওয়া যায়।
একই ইস্যুতে মোহাম্মদ আজম “বাখতিনের উপন্যাসতত্ত্ব’’ শিরোনামের প্রবন্ধে বাখতিনের সুপারিশের আলোকে উপন্যাসের সংজ্ঞা, উপন্যাস ও মহাকাব্যের তুলনামূলক আলোচনা, উপন্যাসের অতীত বৃত্তান্ত, উপন্যাসের কাজ কী?, প্রচলিত উপন্যাস পাঠের সীমাবদ্ধতা,  ভাষার স্বভাব ও প্রচলিত নন্দনতত্ত্বের সংকট, উপন্যাসের ভাষা , শিল্পরীতির নানাবিধ দিক সুচারুরূপে তুলে ধরেছেন। এসব বর্ণ্নার পাশাপাশি প্রবন্ধের শেষের দিকে লেখক তিনটি পর্যালোচনামূলক মন্তব্য তুলে ধরেছেন।  
কুমিল্লা অঞ্চলের একটি বিলুপ্তপ্রায় নদীর নাম ঘুংঘুর। সেটার আদলে নামকরণ হয় “ঘুংঘুর” পত্রিকার। সম্পাদনা করেন প্রবাসী লেখক হুমায়ুন কবির। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ও নবীন লেখকদের লেখা প্রকাশ করে ঘুংঘুর। ২০০৭ সালে যাত্রা করা এই পত্রিকা বিশেষ দুইটা সংখ্যা প্রকাশ করে প্রতি বছর। গত ত্রিশ বছর ধরে নিউইয়র্ক বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। নিউইয়র্ক বইমেলা ও অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে পৃথক সংখ্যা প্রকাশ করে ঘুংঘুর। এছাড়াও সম্প্রতি কলকাতা বইমেলা উপলক্ষে একটা  সংখ্যা প্রকাশ করে ঘুংঘুর।  উপলক্ষ্যের এই দুই ইস্যু  ছাড়াও বর্তমানে অনলাইনে নিয়মিত লেখা প্রকাশ করে  তাঁরা।মফস্বলের তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত লেখক, নতুন লেখক যাদের লেখা আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি তাঁদের লেখা প্রকাশের প্রতি যতœবান ঘুংঘুর।  ঘুংঘুর সম্পাদকীয় থেকে জানা যায়, “ আমরা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বড় শহরের বাইরের সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক অঞ্চলের সাহিত্যচর্চাকে উৎসাহিত করতে চাই, এজন্য মফস্বলের মান সম্পন্ন সাহিত্যকর্মের প্রতিও আমাদের বিশেষ আকর্ষণ থাকে। এই বিষয়গুলো ঘুংঘুর-এর ঘোষিত নীতিমালার সমান্তরাল। আমরা চাই নবীন লেখকরা আরও লেখায় উৎসাহী হোন, সাহিত্যে সম্পৃক্ত হোন। প্রবাসের বৈরী পরিবেশে থেকেও যারা সাহিত্যচর্চা করছেন, আমরা চাই তাঁরা এই অভ্যাসটি চালু রাখুন, বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখুন।”
উপলক্ষ ভিত্তিক প্রকাশিত “ঘুংঘুর” সংখ্যাগুলোর অন্যতম লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো নিয়মিত সম্পাদকের সাথে একজন অতিথি সম্পাদক থাকেন। নিউইয়র্ক বইমেলা ২০২০ সংখ্যার অতিথি সম্পাদক ছিলেন খ্যাতিমান গবেষক ও লেখক আজফার হোসেন। করোনা মহামারীর ভয়াল দিনগুলোতে প্রকাশিত এই সংখ্যার পাঠ বিশ্লেষণে বিষয়বৈচিত্রের উপস্থিতি  আমরা দেখতে পাই। এই সংখ্যার লেখার তালিকায়  বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ যেমনঃ মোহাম্মদ আজমের “জীবনান্দের কবিস্বভাব ও কবিভাষাঃ ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’, আহমাদ মাযহারের “ ‘দূরদেশ’ বাংলা সাহিত্য চর্চা ও বাংলা বইয়ের সংস্কৃতি, বিশ্বসাহিত্য সমালোচনা অংশে ফারুক ওয়াসিফের লেখা “গিলগামেশ মহাকাব্যঃ বিষাদের জন্ম, স্তব্দতার উদয়’’ , গল্পে নুরুদ্দীন জাহাঙ্গীরের “দেবশিশু”,  আফসানা বেগমের “দেয়াল” গদ্য আলেখ্য অংশে মাসুদ খানের “ অভিব্যক্তি”,  গুচ্ছ কবিতা অংশে সোহেল হাসান গালিব ও গুলতেকিন খানের কবিতা, মারুফ রায়হানের একক কবিতা, রাজু আলাউদ্দীন অনূদিত সি পি কাভাফির  “উপেক্ষিত কাভাফির অর্জুন ও আমরা”, তৌকীর আহমেদের ‘গল্পের সিনেমা বা সিনেমার গল্প” এবং সংঘমিত্র ঘোষের  স্মৃতিগদ্য “শান্তিনিকেতনের রোজনামচা” উল্লেখযোগ্য।  ঘুংঘুরের  সর্বশেষ প্রকাশিত সংখ্যা হলো ল-ন বইমেলা সংখ্যা। এই সংখ্যার অতিথি সম্পাদক ছিলেন শাহাদুজ্জামান।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক,   ইংরেজি বিভাগ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিভি সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা।





কবিতা

এই পথ আমার নয়

সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ।।

রাজনীতি আমি বুঝি না, কখনো খুঁজি না।

যদিও মানুষ মুক্তি পায় এই পথ ধরে;
মানুষের স্বাধীনতা আসে এই পথ ধরে।

যদিও ক্ষমতাসীন দল দেখে চেনা যায় দেশ।
চেনা যায় উদার আকাশ; হঠাৎ বিজলীর কর্তৃত্ব।

তবুও এই পথকে উৎকট দুর্গন্ধের মনে হয়।
ভিন্নমতকে দাসত্বে শৃঙ্খলিত করে, কারোও টু শব্দটি
করার সৎসাহস উড়ে যায়; দূরে যায়, ভয়ে পুড়ে যায়...

অদৃশ্য কাঁটা আচ্ছন্ন করে রাখে!
এটা হয়তো আমার মানসিক বিকৃতি।
আমি কখনো একরৈখিক চিন্তার সুখি মানুষ নই।

আমি অক্ষম, তালের সাথে তো নয়-ই,
নজরুল-রবীন্দ্র,লালন-আলিম-আব্বাস ছাড়া
আমি কারো সুরে একদম সুর মেলাতে পারি না।

তবে, আমি সীমারেখা হীন মুক্ত পাখি নই।
আমি চরম জাতীয়তাবাদী; বাঙালি; বাংলাদেশি।

মূর্খতাকে ঘৃণা করি। সুস্থ সভ্যতার বাহনকে
আমি এক ফুৎকারে খারাজি করতে পারি না।

রাজনীতি ফিনিক্স পাখি। তবে
আমি সিনা টান করে সেই গল্প বলতে পারি না।

নির্মম ব্যবস্থাগুলো কণ্ঠনালী চেপে ধরে!

রাজনীতির স্বরলিপি আমি বুঝি না, খুঁজি না।
ঘুণপোকা কুড়ে খায় স্বপ্ন, হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ভ্রƒণ।


গরমিল

বশির আহমেদ ।।

মশার কামড় খেতে খেতে মধ্যরাত,
আকাশে তারা নেই।
আমি রোজ রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
তারার সংসারে কলহের আগুন!
বৃক্ষের পাতাগুলো মোটেই নড়ছে না আজ বাতাসে।
একটি সিগারেটের শেষ চুম্বন
ধোঁয়ায় মিশে যায় ফুসফুসের ক্ষত।
আবেগের বাক্যলাপে কবিতার বাহাদুরি।
মৃত্যুর সনদ বেচাকেনা হয়
ভুয়া নিবন্ধনে পাল্টে যায় পরিচয়
জলমগ্ন জীবন
আমার চোখেই বিশাল সমুদ্র!
কুঞ্জবনে ছুটে যাবার ইচ্ছা হয়
পাহাড়ের সরুপথে মৃত্যুর ভয়
মনের গরমিলে পাখিদের মাঝেও বেড়েছে বিরহ সংশয়।












সর্বশেষ সংবাদ
সকল ভেদাভেদ ভুলে ধানের শীষ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই- ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী
মা ইলিশ রক্ষায় মাঠে নামলেন মৎস্য উপদেষ্টা
ভেরেইনের শতকে বড় লিড দক্ষিণ আফ্রিকার
তিন লিগের জন্য কোটি টাকার স্পন্সর পেল বিসিবি
বুড়িচংয়ের আলোচিত আদনান হায়দারসহ গ্রেপ্তার ২
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ
সুমি জুয়েলার্সের ২৭তম বর্ষপূর্তি উদযাপন
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন
বুড়িচংয়ের আলোচিত আদনান হায়দারসহ গ্রেপ্তার ২
রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ছাত্রসমাজই নির্ধারক, জাপা বিবেকহীন: সারজিস
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২