অনিয়মের অভিযোগে গত ১ জুন থেকে
বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। মাস দুয়েক
আগে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায়
মালয়েশীয় হাইকমিশনার হাযনাহ মো. হাশিম এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে সক্রিয় সিন্ডিকেটগুলো বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া
সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একই সময়ে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি খবরে বলা
হয়, মালয়েশিয়ার চক্র হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে দেশের সব রিক্রুটিং
এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয় না। চক্রে থাকা
এজেন্সিগুলো বসে বসে প্রতি কর্মীর বিপরীতে মোটা অঙ্কের টাকা ‘চক্র ফি’ পায়।
এই টাকার একটি অংশ চলে যায় মালয়েশিয়ার চক্র নিয়ন্ত্রকদের কাছে।
এই
চক্রের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে প্রতারিত হয়েছেন হাজারো কর্মী। এসব কর্মীর
মধ্যে বেশির ভাগই জমি বা শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে এবং চড়া সুদে মহাজনের
কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার টাকা জোগাড় করে। অভিযোগ রয়েছে,
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ছিল দুর্নীতির আখড়া।
সরকার অভিবাসন খরচ ৭৮ হাজার
৯৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও কর্মীরা জনপ্রতি সাড়ে চার থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা
পর্যন্ত দিয়েছেন। আইনে নিষিদ্ধ হলেও ভিসা কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি
ভিসা ন্যূনতম ছয় হাজার রিঙ্গিত করে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কিনেছে।
নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের হোতাদের কর্মীপ্রতি এক লাখ ৪২ হাজার টাকা চাঁদা
দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিপরীতে সেখানে যাওয়া কর্মীরা পাননি কোনো কাজ।
বেতন ও কাজ না পাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন লাখো কর্মী। মালয়েশিয়ায় গিয়েও
অনেকে বেকার থাকছেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে,
মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রবাসী কল্যাণ ও
বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, যেসব
কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, তাঁদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। রিক্রুটিং
এজেন্সিগুলো সরকারের কাছে ১৫ দিন সময় চেয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা
হয়েছে, আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে অর্থ ফেরত দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যারা
টাকা ফেরত দিতে পারবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৯৮৯ সাল
থেকে নিয়মিতভাবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো হচ্ছে। প্রায় আট লাখ
বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। এ ছাড়া সেখানে লাখ দুয়েকের মতো
বাংলাদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছেন, যাঁরা সাধারণত পর্যটন ভিসায় বা অন্য
উপলক্ষে কয়েক দিনের ভিসায় মালয়েশিয়ায় এসে থেকে গেছেন বা বেশি পারিশ্রমিকের
লোভে কর্মরত স্থান থেকে পালিয়ে অন্যত্র কাজ করছেন। আবার এর ভিন্নচিত্রও
আছে। মালয়েশিয়ায় কাজ করতে যাওয়া অনেক শ্রমিক প্রতারণারও শিকার হয়েছেন।
মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও কাজ মেলেনি।
জাতীয় সংসদের সদ্যঃসমাপ্ত বাজেট
অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদে উঠেছিল মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ সম্পূরক প্রশ্নে জানতে চেয়েছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের
মধ্যে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর ব্যর্থতা কার। এ প্রশ্নের জবাবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানিয়েছিলেন, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরত দেওয়ার
পাশাপাশি সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে
ব্যবস্থা নিতে হবে। এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে
হবে।