ছাগলকা-ে
আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার
স্ত্রী-সন্তানদের তথ্য চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং পাসপোর্ট অফিসে চিঠি
দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুদকের প্রধান
কার্যালয় থেকে এ দুটি সংস্থায় চিঠি দেওয়া হয়। মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী ও
পাঁচ সন্তানের নাম উল্লেখ করে পৃথক পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে দুদক সূত্র
জানিয়েছে।
এছাড়া, মতিউর রহমানের পিকনিক স্পট ‘আপন ভুবন’র তথ্য চেয়ে
গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও এসি-ল্যান্ডকে চিঠি দিয়েছে দুদক। তাদের কাছে
পিকনিক স্পটের নামজারিসহ বিস্তারিত নথি চাওয়া হয়েছে।
এর আগে মতিউর
রহমান এবং তার দুই স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদের বিবরণী জমা দিতে নোটিস দেয়
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয়
থেকে পাঠানো পৃথক চিঠিতে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের সম্পদের হিসাব চাওয়া
হয়েছে।
নোটিসে বলা হয়েছে, অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে
যে, আপনারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির
মালিক হয়েছেন। নিজ ও আপনাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত
যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত
বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন।
দুদক কার্যালয়ে সংস্থাটির সচিব খোরশেদা
ইয়াসমিন এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেন, অবৈধ সম্পদের
অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মো. মতিউর
রহমান, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের সন্তান আহমেদ তৌফিকুর
রহমান অর্নব ও ফারজানা রহমান ইন্সিতা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার
শিভলীর নামে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা ও দুর্নীতি দমন
কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ বিধি ১৭(১) অনুযায়ী সম্পদ বিবরণীর নোটিস জারি করা
হয়েছে।
এ আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী
দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন
কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগ গত ৩০
জুন দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও
সন্তানদের নাম উল্লেখ করে ঢাকা, নরসিংদী ও মুলাদির সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও
ভূমি অফিস, রাজউক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক পৃথক চিঠি
দেওয়া হয়।
ছাগলকা-ে আলোচিত মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের দুর্নীতি ও
অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এজন্য দুদকের
উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্ব তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন-সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ও উপসহকারী
পরিচালক সাবিকুন নাহার। কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
অভিযোগ
ওঠার পরপরই মতিউর রহমানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাইজ
ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ
সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
একাদশ বিসিএসের (শুল্ক ও
আবগারি) কর্মকর্তা মতিউর রহমান রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত
পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই পদ থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়।
গত
ঈদুল আজহার আগে মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো
থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল এবং ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার
গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে উঠে আসে। এ নিয়ে
দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।