বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়।
এর সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে দেখা
যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়।
চাহিদা সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট
তৈরি করে কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে কিনেছেন—এমন মিথ্যা তথ্য
দিয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেন।
ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাধ্য হয়েই ভোক্তাকে এসব পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয়।
কোনোভাবেই
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকাশিত তথ্য বলছে, ৯.৭৩
শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। অথচ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৬ শতাংশে
বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল সরকার।
পরে তা সংশোধন করে ৭.৫ শতাংশ
করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫
শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে খাদ্য
মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৪২ শতাংশ।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব
বাংলাদেশের (টিসিবি) ২০২৩ সালের জুলাই মাসের বাজারদর ও চলতি জুলাই মাসের
বাজারদর পর্যালোচনা করে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এক
অর্থবছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪৩ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে
মানভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারে সবচেয়ে বেশি
চাহিদাসম্পন্ন মোটা চাল ব্রি-২৮ বা পাইজাম ৬ থেকে ৯ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে
৫৩ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ৫০ থেকে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম
বেড়ে মানভেদে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪৭ থেকে ৬২ শতাংশ পর্যন্ত
দাম বেড়ে প্রতি কেজি আলু ৫৬ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক অর্থবছরের
ব্যবধানে বেশি দাম বেড়েছে শতভাগ আমদানীকৃত মসলাজাতীয় পণ্য এলাচের।
পণ্যটির দাম ৫২ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
গত
১৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ভোজ্য তেল ও
চিনির আমদানি, মজুদ ও মূল্য পরিস্থিতিসংক্রান্ত সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বলেছিলেন, দেশের বাজারে ১ জুলাই থেকে সিন্ডিকেট বলে কিছু থাকবে না। বাস্তবে
তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বাজারগুলোতে এখনো সক্রিয় সিন্ডিকেট।
সরবরাহের কোনো ঘাটতি না থাকলেও নানা অজুহাতে একের পর এক পণ্যের দাম তারা
বাড়িয়েই যাচ্ছে। ফলে চাপে থাকা ভোক্তারা আরো চাপে পড়ছে।
পণ্যের, বিশেষ
করে খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশের
মূল্যস্ফীতির জন্য চাহিদা ও সরবরাহ দুটি কারণই দায়ী। অর্থনীতিবিদরা মনে
করছেন, আমদানি ঠিক রেখে সাপ্লাই চেইন সচল রাখার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও
বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়। সরকারের সামনে
বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি রোধ, যা দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব
ফেলছে। মূল্যস্ফীতি রাজনৈতিকভাবেও সংবেদনশীল। দীর্ঘ সময়ে অধিক মূল্যস্ফীতি
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। তাই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে
হবে।