সর্বজনীন
পেনশন তহবিলের অর্থ সরকারি অবকাঠামো উন্নয়নসহ সাত খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।
তবে, কোনোভাবে পেনশন স্কিমের এ অর্থ ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে
বিনিয়োগ করা যাবে না। এমন বিধান রেখে ‘সর্বজনীন পেনশন তহবিল (বিনিয়োগ ও
সংরক্ষণ) বিধিমালা ২০২৪’ জারি করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত
সচিব দিলরুবা শাহীনের সই করা এই বিধিমালা গত ৯ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশিত
হয়েছে।
‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’-এর বিধান মতে, এই
বিধিমালা জারি করা হয়েছে। আইনের ১৮ নম্বর ধারায় বলা আছে-এ আইনের আওতায়
চাঁদার মাধ্যমে সংগৃহীত পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের বিষয়টি বিধি দ্বারা
নির্ধারিত হবে।
উল্লেখ্য, পেনশন আইনেও তহবিলের অর্থ কম ঝুঁকিপূর্ণ খাতে
বিনিয়োগের কথা বলা আছে। আইনে উল্লেখ আছে, ‘ৃপরিচালনা পর্ষদ পেনশন তহবিলের
অর্থ সরকারি সিকিউরিটি, কম ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য সিকিউরিটিজ, লাভজনক
অবকাঠামো ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত গাইডলাইন অনুমোদন এবং সময়
সময়, প্রয়োজনীয় পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।’
বিধিমালায় পেনশন
তহবিলের অর্থ যেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যাবে, তা হচ্ছে- ট্রেজারি বন্ড;
ট্রেজারি বিল; অন্যান্য সরকারি সিকিউরিটি (যেমন- সুকুক-সরকারি ঋণ আইনের
আওতায় শরিয়াহসম্মত বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় বিনিয়োগ গ্রহণের লক্ষ্যে সরকার
কর্তৃক ইস্যুকৃত সরকারি সিকিউরিটি); উচ্চ রেটিংসম্পন্ন কোনও তফসিলি ব্যাংকে
স্থায়ী আমানত (বাংলাদেশে অনুমোদিত রেটিং সংস্থা বা স্বীকৃত কোনও
আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক দীর্ঘমেয়াদে অন্যূন ‘এএ’ এবং স্বল্পমেয়াদে
অন্যূন ‘এসটি-ওয়ান’’ অথবা সমমান রেটিং); বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড
এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বা নিয়ন্ত্রিত মিউচুয়াল ফান্ড; বাংলাদেশ
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত এবং স্টক এক্সচেঞ্জে
তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির বন্ড; এবং সরকার বা সরকারি কোনও সংস্থা কর্তৃক
অবকাঠামো উন্নয়নে বাস্তবায়নাধীন বা বাস্তবায়িত কোনও প্রকল্প বা প্রকল্পের
সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ।
তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ সরকারি সিকিউরিটি ব্যতীত
অন্য কোনও একক খাতে ২৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না বলে বিধান যুক্ত
করা হয়েছে। বিধিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে
এই উপবিধির কোনও কিছুই প্রযোজ্য হবে না।
তহবিলের অর্থ কোনোভাবেই ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যাবে না বলে বিধিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
বিধিতে
তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় পেনশন
কর্তৃপক্ষের সদস্য তহবিল ব্যবস্থাপনার সভাপতিত্বে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা
হবেন-কর্তৃপক্ষের সদস্য (বিনিয়োগ নীতি); অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ
ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ এবং প্রবিধি অনুবিভাগের (অন্যূন যুগ্ম সচিব
পদমর্যাদার) একজন করে প্রতিনিধি; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের
চেয়ারম্যান বা তার মনোনীত অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি; বাংলাদেশ
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অন্যূন পরিচালক পদমর্যাদার একজন
প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অন্যূন পরিচালক
পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি। পেনশন কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক (তহবিল
ব্যবস্থাপনা) এ কমিটির সদস্য সচিব হবেন। তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনে
যেকোনও ব্যক্তিকে কমিটির সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করতে পারবে বলেও বিধিতে
উল্লেখ রয়েছে।
তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার
আওতায় ঘোষিত স্কিমগুলোর নামে এক বা একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পৃথক পৃথক
ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে। ব্যাংক হিসাবগুলোতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায়
ঘোষিত সব স্কিমের অর্থ জমা হবে বলেও বিধিতে বলা হয়েছে।
এ বিধিমালা
প্রবর্তনের আগে কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান বা এর কোনও সদস্য বা কোনও
কর্মচারী কর্তৃক তহবিলের সংরক্ষণ ও বিনিয়োগ সংক্রান্তকৃত কোনও কার্য বা
উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত নিলে, তা এই বিধিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া
সাপেক্ষে, এই বিধিমালার অধীনে কৃত বলে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,
‘আইনের অধীনেই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের জন্য এই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
আইনে কম ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের কথা বলা আছে। সেই অনুযায়ী কোন কোন
ক্ষেত্রগুলোতে পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে, তা স্পষ্ট করা হয়েছে।’