জীবনযাত্রার পরিবর্তিত ধরনসহ নানা কারণে রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। সেই সঙ্গে আছে বায়ুদূষণ, পানিদূষণসহ নানা ধরনের দূষণ। আছে খাদ্যে ভেজাল। এসব কারণে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভার, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ আরো অনেক রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
সেই সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরাসহ আরো অনেক রোগ। ফলে মানুষের হাসপাতালমুখী হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই বেসরকারি হাসপাতালের অতি উচ্চমূল্যের চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাদের ভরসা সরকারি হাসপাতাল।
কিন্তু সরকারি হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় শয্যাসংখ্যা খুবই কম। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেও অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেছেন, সারা দেশের ৫০ শয্যা হাসপাতালগুলো ক্রমান্বয়ে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটি এখন সময়ের দাবি।
সরকার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন এসব পদক্ষেপ সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর আগেও জেলা পর্যায়ের ১০০ শয্যার কিছু হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেসব হাসপাতালে সেবা প্রদানের মান খুব একটা উন্নত হয়নি বলেই অভিযোগ রয়েছে। কালের কণ্ঠে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে বরগুনা সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
কিন্তু জনবলকাঠামো রয়ে গেছে ১০০ শয্যারই, অর্থাৎ হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে আগের মতোই ৫৫টি। কিন্তু বাস্তবে চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ১৫ জন চিকিৎসক। বরিশাল বিভাগে থাকা জেলা পর্যায়ের অন্য হাসপাতালগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। আর তার চেয়েও খারাপ অবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর। পটুয়াখালীর ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কুয়াকাটা ও কাঁঠালতলীর ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালের জন্য অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ আছে ২০১টি। তার বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৯৮ জন। অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। কাছাকাছি অবস্থা বিভাগের অন্যান্য উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সেরও। এ অবস্থায় কেবল হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে খুব একটা লাভ হবে কি? শয্যাসংখ্যার পাশাপাশি চিকিৎসক ও অন্যান্য লোকবল বাড়াতে হবে। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে।
শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি হাসপাতালগুলোর সমন্বিত পরিকল্পনা, তদারকি ও ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার সেভাবেই স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।