স্বাস্থ্য
ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, মানুষের উপকারে আসবে
এমন প্রকল্প বা হাসপাতাল তৈরির কাজই আমি করবো। যেমন ক্যান্সার হাসপাতাল,
কিডনি হাসপাতাল, হৃদরোগ হাসপাতাল। প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে বার্ন ইউনিট,
ক্যান্সার, কার্ডিয়াক, নেফ্রোলজির যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করাটা আমার
লক্ষ্য। একটি দরিদ্র লোক রংপুর থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য ঢাকা আসবেন, সেটা তো
হয় না। আমি এমন প্রকল্প নিয়েই কাজ করবো, যেটা শেষ করতে পারবো। সেটা এখন
থেকেই করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটার সদ্ব্যবহার করতে
পারলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর
আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) কর্তৃক আয়োজিত
‘বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য অভিঘাতের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য’ শীর্ষক সেমিনারে
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বলেন, আমি বিগত ৪৮ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবা বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ
করেছি। পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক সব জায়গা সরজমিন পরিদর্শন
করেছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রান্তিক পর্যায়ে জনগণের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা যদি
নিশ্চিত করতে না পারি, ঢাকায় বসে যতই লেকচার দিই না কেন কোনও লাভ হবে না।
তাই গ্রামাঞ্চলে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করাটাকে আমি
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, নিজে প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে
চেকআপ করি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখি মেশিন ঠিক আছে কি না। ওখানে গিয়ে
দেখলাম হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিসের রোগী অনেক বেশি। আমি রোগীদের সঙ্গে কথা
বলে নিশ্চিত হয়েছি, সব জায়গায় রোগীদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আমরা যদি ব্লাড
প্রেসার, ডায়াবেটিসের যথাযথ চিকিৎসা এবং ওষুধ দিতে পারি, তাহলে ঢাকা শহরে
এত বড় বড় বিশেষায়িত হাসপাতালের দরকার হবে না।
অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ
ব্যবহার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া সামান্য
সর্দি-জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল
রেসিস্টেন্ট ভয়ানক একটা জিনিস। এ প্রসঙ্গে ডিজি ড্রাগকে আরও শক্ত হতে
বলবো। ফার্মেসিতে গিয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া
অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে আমরা ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন সিস্টেম চালু করার
চেষ্টা করছি। ইলেকট্রনিক প্রেসক্রিপশন সিস্টেম যদি চালু করা যায় তাহলে
যথাযথ মনিটরিং করা সম্ভবপর হবে। ওষুধের যথেচ্ছ এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার
নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের
উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আমি মন্ত্রী হওয়ার মেয়াদ মাত্র ৬ মাস। এই
সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে আমি অন্তত ৭টি সভা করেছি। যেভাবেই হোক এটা
জাতীয় সংসদ নিয়ে যাব। কারণ, রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা
আমার দায়িত্ব।
স্বাস্থ্যখাতের সমস্যা মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করার
আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সমস্যা নিরসনে
আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপার জনমত তৈরি করতে হবে। সাংবাদিক
ভাইদের সহযোগিতায় এবং সৃষ্ট জনমতের কারণে ৫ থেকে ৫০০ বেডের বার্ন হাসপাতাল
তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বার্ন হসপিটাল।
একটা রোগীও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে না। রোগীরা আইসিইউতেও পর্যাপ্ত
চিকিৎসা পাচ্ছেন, স্থান সংকুলান হচ্ছে। যেটা আগে সম্ভব ছিল না।
বিআইডিএসের
মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক
বাংলাদেশ পারিবারিক আয় ব্যয় জরিপের ২০২২ (ঐওঊঝ) ভিত্তিতে তার গবেষণা
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএসের গবেষক, শিক্ষক
শিক্ষার্থী, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।