কোটা
সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির
মধ্যে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে স্বাস্থ্য
অধিদফতরের ২৩টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া আরও ২৮টি গাড়ি ভাঙচুর করা
হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের ব্যবহৃত গাড়িও আছে। মোট
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ১৮ ও ১৯ জুলাই
রাজধানীর মহাখালী এলাকায় দুর্বৃত্তদের তা-বে বাদ যায়নি সরকারের এই
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরনো ভবন হিসেবে পরিচিত
মহাখালী কাঁচা বাজারের পাশে কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান
আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
মহাখালী কাঁচা বাজারের পাশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরনো ভবন, বাংলাদেশ কলেজ
অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) ভবন, সম্প্রসারিত টিকাদান
কর্মসূচি ভবন, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য অধিদফতর (আইপিএইচ), জাতীয়
পুষ্টি কর্মসূচির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর মধ্যে
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরনো ভবনের সামনে পার্কিংয়ে রাখা ২৩টি গাড়িতে আগুন
দেওয়া হয়। ভাঙা হয়েছে ভবনের প্রধান ফটক ও ভবনের গ্লাস। ভাঙচুর করা হয়
বিভিন্ন অফিসের ২৮টি গাড়ি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিরাপত্তা কর্মী
জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর কিছু কর্মচারী বন্ধের দিনও দায়িত্বরত
ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগের সার্ভার থাকার কারণে ২৪ ঘণ্টা
কোনও না কোনও কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের সঙ্গে হঠাৎ ধাওয়া পাল্টা
শুরু হলে কয়েকশ আন্দোলনকারী স্বাস্থ্য অধিদফতরের গেটের কাছে ছুটে আসে।
এখানে আওয়ামী লীগের কর্মী আছে বলে তারা চিৎকার করতে থাকে। গেট বন্ধ থাকলেও
সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে গেট ভেঙে ফেলে।
তিনি আরও জানান, গেট ভেঙে প্রবেশ
করে একাধারে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এক পর্যায়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত গান পাউডার
ব্যবহার করে আগুন গাড়িগুলোতে ধরিয়ে দেয়। এতে ২৩টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সেখানে অবস্থিত অধিদফতরের কয়েকজন কর্মী সেদিন জলন্ত গাড়িগুলো থেকে কিছুটা
দুরে সরিয়ে নিলে বাকি গাড়িগুলো আগুনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
তার মতে, ৪-৫ মিনিটের মধ্যে গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সরে পড়ে দুর্বৃত্তরা।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষও।
স্বাস্থ্য
অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহেমদুল কবির জানান,
এরকম একটি ঘটনায় আমরা খুবই ব্যথিত। চিকিৎসকদের গাড়িতে হামলা হবে আমরা
কল্পনা করতে পারিনি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.
টিটো মিয়া জানান, প্রথমে এসে তারা এখানে ভাঙচুর করেছে। আমার ব্যক্তিগত
গাড়িসহ অনেক লাইন ডিরেক্টরের গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আমরা শুনেছি যে, দুটি
গ্রুপ এসে গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমাদের এখানে
এমআইএস ডাটা সেন্টারে ভাঙচুর করা হয়েছে, সেখানেও ক্ষতি করেছে।
হামলার
ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য
অধিদফতর। বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন
করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন আগুনের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে
নিজেই গত রবিবার (২১ জুলাই) ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, স্বাস্থ্য
অধিদফতরের পুরনো ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছে।
বুধবার বিকালে তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি করা
হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতির পরিমাণ
শত কোটির কাছাকাছি হবে। স্বাস্থ্য খাতের ওপরে এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘এমআইএস’ অর্থাৎ যেখানে সারা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা
কন্ট্রোল করা হয়, সেখানেও আগুন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাশাপাশি
দুর্বৃত্তরা মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। এটা
ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ সব ঘটনায় যারা দোষী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া
উচিত।’’