কোটা
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আলটিমেটাম দিলেও
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের দাবি এবং চলমান
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বুধবার বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামালের দপ্তরে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
কোটা
সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা শুরু হয় গত ১৫ জুলাই। ১৬ জুলাই
ছয়জনের প্রাণহানিসহ ১৮ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পাঁচ দিনে আন্দোলনের মধ্যে
সংঘর্ষ, গুলি ও সংঘাতে ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণ যায়।
এই
আন্দোলনে ১৫ জুলাইয়ের আগেই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যাক্রম
স্থবির হয়ে পড়ে। তার আগে থেকে চলছিল পেনশন নিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি। আর ১৫
জুলাইয়ের পর একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা শুরু হয়। পরে
আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় ধাপে ধাপে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
করা হয়।
গত রোববার কোটার নতুন বিন্যাস ঠিক করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল
বিভাগ। পরদিন শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি দাবি দিয়ে সেসব পূরণে ৪৮ ঘণ্টা
আলটিমেটাম দেন।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীদের শতভাগ
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বিবেচনা করতে
পারছি না। ঘোষণা দিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা কারো কাম্য নয়। সেজন্য
আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
“এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান।
তাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছি। সেই
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার
আগে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলা হচ্ছে। সেগুলো আগে নিশ্চিত করতে হবে।
তাড়াহুড়ো করে খুলে দিয়ে আবারও অরাজকতা আমরা চাচ্ছি না।”
শিক্ষার্থী বা
আন্দোলনকারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রথম থেকে দেখা যাচ্ছে, ঘোষণা হচ্ছে
একটা আর কাজ হচ্ছে আরেকটা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে এই করতে,
সেই করতে। কিন্তু যারা বাস্তবায়ন করছে, তারা কিন্তু সেটা আর শান্তিপূর্ণ
প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখছে না।
“আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) পরীক্ষা আগেই
স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষার বিষয়টা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার
পাচ্ছে। দুই কোটির বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তাই
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আগে খোলা যায় কিনা পর্যালোচনা করছি। এই সপ্তাহ
কারফিউ বলবত আছে। জেলা প্রশাসকদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা অবস্থা বুঝে
কারফিউ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে আমরা
স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেব। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এক ধরনের হতে
পারে, বিদ্যালয়গুলোর জন্য এক ধরনের হতে পারে।”
শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আল্টিমেটাম দিয়ে দিয়ে যাতে করে কেউ পরিস্থিতি
অস্থিতিশীল করতে না পারে আমরা সেই অনুরোধ করব।
“আল্টিমেটামের পর যখন
হত্যাযজ্ঞ হয়, নরহত্যা হয়, রগ কেটে দেওয়ার মতো কাজ হয়, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে
ছারখার করে দেওয়ার মতো কাজ হয়, তখন আল্টিমেটাম যারা দিচ্ছেন তাদের কাছে
আমাদের প্রশ্ন থাকবে যে আল্টিমেটামের উদ্দেশ্য কী এগুলো?”