প্রত্যেক মা-বাবাই সন্তানের ভালো চান। ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসবে।
তাই
সন্তানের উত্তম চরিত্র গঠনের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে
মাকে। তারপর বাবার। মা-বাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রতিটি সন্তান হবে
আদর্শ চরিত্রবান।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ইমানদাররা,
তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও, যার জ্বালানি
হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছেন কঠোর ফেরেশতাকুল, সৃষ্টিগতভাবে ফেরেশতাদের
আল্লাহর অবাধ্যতার শক্তি দেওয়া হয়নি। সর্বদা তারা আল্লাহর হুকুম পালন
করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা (ফেরেশতারা) তা অমান্য করে না, যা আল্লাহ
তাদের আদেশ করেন। তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তা-ই করে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত
৬)
ইসলামি বিধান অনুযায়ী আমাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
একজন বাবা বা মা হিসেবে আমরা কি আমাদের প্রতিপালকের এ বিধান পালন করছি যদি
করে থাকি, তবে কিশোর গ্যাংয়ের মতো কালচার আমাদের দেশে গড়ে উঠছে কীভাবে
ইন্টারনেট
প্রযুক্তি আমাদের বিশ্ব সমাজ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে। এর ফলে নানা
রকম আচার-আচরণ এমন কী বাচনভঙ্গিও আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচলন করছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পশ্চিমা
জীবনধারার প্রতি এক ধরনের মোহ তৈরি করছে। ফলে পশ্চিমা জীবনধারার ভালো
দিকগুলোর সঙ্গে সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের মতো ভয়ানক কালচারগুলোও আমাদের সমাজে
জায়গা করে নিচ্ছে।
একসঙ্গে মাদক নেওয়া, নিজ সীমানা নির্ধারণ করে
চাঁদাবাজি, অপর গ্যাংদের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক মারধর এসবই মূলত কিশোর
গ্যাংগুলোর আচরণগত বৈশিষ্ট্য। এ কারণেই সুযোগসন্ধানীরা কিশোরদের দিয়ে অপরাধ
করিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে নেয় এবং তাদের আরও অপরাধ করতে উৎসাহিত করে। তাই
কিশোরদের সচেতনতা এবং নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য বড়দের নিজ উদ্যোগে এগিয়ে
আসা জরুরি। সমাজে যারা অপরাধে যুক্ত তাদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করে
সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র শিশু-কিশোরদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। কোনো
অবস্থাতেই যেন কিশোররা অপরাধে যুক্ত হতে না পারে সেজন্য সমাজে সংগঠন তৈরি
করে কিশোর গ্যাংসহ সব অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর এ
ব্যাপারে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। ’ বুখারি।
আমাদের সন্তান
মাদকে আসক্ত কিনা, কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত কিনা, এসব বিষয়ে খেয়াল রাখার
দায়িত্ব আমাদের। অপরাধ করলে শাসন থেকে একবারে উদাসীন হওয়া যাবে না। আবার
শাসনের নামে অতিরিক্ত কিছু করা যাবে না। তাকে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা
দেওয়া জরুরি।
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘অন্যায় ও পাপ কাজ দেখলে কেউ যদি তা বাধা না দেয়, নির্মূল করতে চেষ্টা না
করে, তাহলে অচিরেই তারা আল্লাহর আজাবে পতিত হবে।’ তিরমিজি।
অপরাধ থেকে
রক্ষার জন্য নিজ সন্তানকে সময় দিতে হবে। তাদের বন্ধু নির্বাচনের
প্রক্রিয়াকে কৌশলে প্রভাবিত করতে হবে। আপনার সন্তান যাতে বিপদগামীদের সঙ্গে
না মিশে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সুন্দর আচারব্যবহার শেখাতে হবে।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া, নামাজসহ অন্য ইবাদতে অভ্যস্ত করে ধর্মীয়
শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ কর এবং তাদের ভালো ব্যবহার শেখাও।’
(বুখারি)