উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘যে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, প্রকৃত পক্ষে সেই ছাত্র আন্দোলন হাইজ্যাক করা হয়েছিল। যারা নাশকতাকারী, যারা রাষ্ট্রবিরোধী, যারা সরকার এবং রাষ্ট্রকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে চায় তারাই মূলত ছাত্র আন্দোলন হাইজ্যাক করেছিল।’
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকেলে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনে ঘটা সহিংসতায় হওয়া ধংসযজ্ঞ পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, এই নৈরাজ্য পরিস্থিতি যারা সৃষ্টি করেছিল তাদের মধ্যে কেউ ছাত্র ছিল। খবর পেয়েছি সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে দুটি রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জেলা পুলিশের উদ্যোগে মহাসড়কে মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেই হকাররাও এই নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য জ্বালাও-পোড়াও কাজে অংশগ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এই সম্মিলিত গোষ্ঠীর মূলত উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রকে অকার্যকর করা ও সরকারকে উচ্ছেদ করা। অর্থাৎ রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজটাই তারা করেছে। এর সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্ররা এসব জ্বালাও-পোড়াও করেনি। বাংলাদেশের কোথাও তারা জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুরে অংশ নেয়নি।
ডিআইজি বলেন, সাভারে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেগুলো পরিদর্শন করতে আজ এখানে এসেছি। এখানে ২০টির ওপরে প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো তছনছ করা হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পশু সম্পদ অফিস। পশু সম্পদ অফিস ভাঙচুর করে গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, সড়কে অনেকগুলো গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। পুলিশের যে স্থাপনা রয়েছে পুলিশ বক্স, ডিবি কার্যালয় তছনছ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ বক্স একেবারে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। এছাড়া সিটি সেন্টারসহ শপিংমল, দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনদিন ধরে এই নৈরাজ্য চালিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ বিশেষ করে নরসিংদী জেলায় জেল লুট করা হয়েছে। ৮২৬ জন কয়েদিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। জেলখানাতে যেসব দুর্র্ধষ আসামি ছিল যেমন একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি, মার্ডার মামলার আসামি এবং ৯ জন জঙ্গিসহ দুর্র্ধষ আসামিদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। ৮ হাজার রাউন্ডের বেশি গুলি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা এই অস্ত্র গুলি পুলিশের বিপক্ষে দুই দিন ধরে ফায়ার করেছে। ওখানে একটা এপিসি আছে, এপিসির কয়েকটি জায়গা ছিদ্র হয়েছে এই অস্ত্রের দ্বারা। সুতরাং, এই কার্যকলাপগুলো জেলখানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট করে সেই অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জ্বালিয়ে দেওয়া ভাঙচুর করা এই কাজগুলো কখনো ছাত্রদের হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে ভিডিওচিত্র আছে যেখানে কোনো ছাত্রের অস্ত্রিত্ব আমরা খুঁজে পাইনি। যাদেরকে দেখেছি তারা দুষ্কৃতকারী, তারা নৈরাজ্যকারী, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে তারা মূলত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল এবং সরকার পতনের মধ্য দিয়ে তারা ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। তারা এই কাজগুলো করেছে এর অংশ হিসেবে সাভার আমরা পরিদর্শন করলাম, সাভারে দেখলাম অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেক লুটপাট হয়েছে। পশুসম্পদ অফিসে আমরা দেখলাম, সব রুম তছনছ করা হয়েছে। এসিগুলো পর্যন্ত খুলে নিয়ে লুট করা হয়েছে। এমনকি টয়লেটের যে কমোড রয়েছে, সেই কমোড পর্যন্ত লুট করে নিয়ে গেছে। তার মানে এরসঙ্গে শুধু ভাঙচুরকারী না লুটেরেরাও অংশ নিয়েছিল। যাদের লুট করাও উদ্দেশ্য ছিল। বাংলাদেশ পুলিশ এদেশের মানুষের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ দাঁড়িয়েছে, সাধ্যমতো আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতেও আইন প্রয়োগ করে যাবে।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা জেলায় ১৯ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আড়াই শতাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোনো ধরনের হতাহতের তথ্য বর্তমানে পুলিশের কাছে নেই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন - ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আবদুল্লাহিল কাফি, সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) শাহজামান ও আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) এএফএম সায়েদসহ আরও অনেকে।