সরকারের
সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ থেকে বাদ যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নতুন নামে পেনশন
স্কিম চালু হবে।
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকালে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে
পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি সংক্রান্ত বৈঠকে
এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ
করা লাগবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এতে অংশ নেওয়া
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের
চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীসহ আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বসেছিলাম। শিক্ষকরা
তাদের দাবি জানিয়েছেন। আমরা আলোচনা করেছি। আমরা মনে কারি আলোচনার মধ্যেই সব
সমাধান। তাদের কথাগুলো আমরা শুনেছি, দেখা যাক।’
‘প্রত্যয়’ স্কিম থেকে
বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
‘তাদের দাবিগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করবো (অর্থ বিভাগের সঙ্গে)। পরবর্তীতে
সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবো। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বলিনি। আমরা
ইতিবাচকভাবেই আলোচনা করেছি।’
বৈঠকে উপস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের
একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম থেকে
বিশ্ববিদ্যালয় বাদ যাচ্ছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব অর্থ
মন্ত্রণালয়ে যাবে। তারপর একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটি হবে। তবে আমাদের
অন্য দাবিগুলো দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যাবে। এখনও চূড়ান্ত কিছুই হয়নি। আলোচনা
হয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না
করার শর্তে বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম বাদ যাচ্ছে। কিন্তু সুপার বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকদের সুপার গ্রেড নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেওয়া হলে অর্থ
মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এ
বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের বিষয় রয়েছে। আর স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো তো
আলাদাভাবে হতে পারে না। যখন নতুন পে-স্কেল দেওয়া হবে তখন শিক্ষকদের জন্য
স্বতন্ত্র পে-স্কেলের প্রস্তাবনা দেওয়া হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এটি দীর্ঘ
প্রক্রিয়ার বিষয়। তবে আজকের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি পূরণ
হয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, সুপার গ্রেড সিনিয়র সচিব পদ মর্যাদা সমমান। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
গত
জুনের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’-এ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে
আন্দোলনের ঘোষণা দেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের দাবি
ছিল—সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাতিল
করা। এর সঙ্গে যোগ করা হয় ২০১৪ সালে আশ্বাস দেওয়া শিক্ষকদের জন্য বিশেষ
গ্রেড (সুপার গ্রেড-সিনিয়র সচিব সমমান) নিশ্চিত করা। জুনের মধ্যে দাবি না
মানলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যান তারা। সব ধরনের ক্লাস
পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয় তাদের আন্দোলনের ফলে।
এরই
ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৯ জুলাই) বিকালে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান
চৌধুরী। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড.
কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা
প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার চাঁপা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো.
সোলেমান খান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মো. আখতারুল
ইসলাম, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ড. মো. নিজামুল হক
ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত
হুদা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. হাবিবুর
রহমান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো.
আবদুর রহিম (ঢাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক
ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির
সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য,
চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকেই সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম
যাত্রা শুরু করে। এর আগে গত ২ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি
করা হয়। সমাজের সব স্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্যে
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইন করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এর আলোকে
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত,
স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য
‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রবর্তন করা হয়।