সাড়ে চার ঘণ্টা চট্টগ্রাম আদালত সড়ক থেকে সরেছেন কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৩১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে নিউমার্কেট পর্যন্ত যাওয়ার পর কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। দুপুর থেকে আজ চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করেন। তবে আজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বুধবার বেলা ১১টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণের প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভে অংশ নেন চট্টগ্রাম আদালতের বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিতসহ দল নিরেপক্ষ আইনজীবীরা।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সোনালী ব্যাংকের সামনে অবস্থান নিয়ে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ শিরোনামে আয়োজিত এই কর্মসূচি পালনের সময় তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কিছু শিক্ষার্থীকে আদালতের প্রবেশ পথে থাকা দেয়ালে বিভিন্ন স্লোগান লিখতে দেখা গেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একজন আবদুল আজিজ বলেন, বুধবার সারা দেশের আদালত প্রাঙ্গণে আমাদের কর্মসূচি ছিল। সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণপ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম খুনের প্রতিবাদে ও ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামে এ কর্মসূচি চট্টগ্রামে সফলভাবে পালন করা হয়।
তিনি বলেন, কর্মসূচি চলাকালে আদালত ভবনের প্রবেশ পথ থেকে আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। কোনও কারণ ছাড়াই পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে কর্মসূচি সফল করেছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত এ কর্মসূচি শুরুর আগে থেকে পুলিশ, বিজিবিসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আদালতের প্রবেশ পথে অবস্থান ছিল। প্রবেশ পথে অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে আদালতে বিনা কারণে এবং সন্দেহজনক কাউকে উঠতে দেওয়া হয়নি। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা আদালতের প্রবেশপথে জড়ো হতে থাকেন। কিছু শিক্ষার্থী জড়ো হন জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। আদালতের প্রবেশপথ সোনালী ব্যাংকের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন।
কর্মসূচি পালনের সময় বেলা ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালত সড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল। এতে দুর্ভোগে পড়েন আদালত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসা লোকজন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি সাধারণ নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। এখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়েছে। কোনও শিক্ষার্থীর হাতে একটি লাঠিও ছিল না। আমাদের প্রতিবাদের ভাষা হবে মুখে, হাতে নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি জানানোর অধিকার দিতে হবে। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী এবং চট্টগ্রাম জেলা পিপি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দিইনি। তবে আদালতের ওপরে যাতে না উঠে এ জন্য আমরা সতর্ক ছিলাম। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে বিএনপি-জামায়াতের অপশক্তি যাতে আদালতে কোনও ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করতে না পারে- এ জন্য আমরা সজাগ ছিলাম।
এদিকে, শিক্ষার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের একটি অংশ আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা মিছিল নিয়ে সামনে গেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি হন। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা আইনজীবীরা উভয় পক্ষকে নিভৃত করেন।
এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম ওবায়েদুল হক।