বর্ষা এলেই বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবছরই ভূমিধসের এমন অনেক ঘটনা ঘটছে। বহু প্রাণহানিও হচ্ছে। এ বছর এরই মধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ধসের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনায় অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন নি¤œাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে তিন দিনের লাগাতার বর্ষণে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দক্ষিণ-পূর্বাংশের লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার উপকূলেও প্রবল বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি এসব জেলায় ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে, কিন্তু অনেকেই সরছে না। ফলে যেকোনো সময় ভূমিধসে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
মানুষের আগ্রাসী কর্মকা-ের কারণে পাহাড় ক্রমে ন্যাড়া হয়ে পড়ছে। পাহাড়ের ভূমিক্ষয় বাড়ছে। ফলে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সারা পৃথিবীতেই বাড়ছে ভূমিধস ও প্রাণহানির ঘটনা। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার পার্বত্য জেলা ওয়েনাড়ের কয়েকটি গ্রামে পর পর ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে।
এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা তিন শ ছাড়িয়ে গেছে। এখনো দুই শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। বাংলাদেশেও পাহাড়গুলোর অবস্থা ভালো নয়। গাছপালা কেটে বেশির ভাগ পাহাড় ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। একটানা বৃষ্টির সময় মাটি নরম হয়ে যায়। সেই পরিস্থিতিতে পাহাড়গুলোর মাটি ধরে রাখতে পারে না। অন্যদিকে সেসব পাহাড় বা পাহাড়ের পাদদেশে মানুষের বসবাসও ক্রমেই বাড়ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাহাড়ধসের দুটি বড় ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ ও ২০১৭ সালে। ২০০৭ সালে ১২৭ জন আর ২০১৭ সালের ঘটনায় চার সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬৮ জনের অকালমৃত্যু হয়েছিল। পাবর্ত্য জেলা শহর রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। এ বছর এরই মধ্যে কক্সবাজারে একাধিক পাহাড়ধসে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়।
আমরা চাই না, এমন শোকাবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। তাই আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জানা যায়, কিছু প্রভাবশালী লোক পাহাড়ে কিংবা পাহাড়ের নিচে কোনো প্রতিরক্ষা ছাড়াই খুপরি ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়। ভাড়া কম হওয়ায় দরিদ্র লোকজন সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়। তারাই প্রধানত এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ভূমিধস রোধে বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিটিগুলো যেসব সুপারিশ করেছিল পর্যায়ক্রমে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।