টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ক্যাম্পাস। পুকুর খননসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও তিন যুগেও মেলেনি জলাবদ্ধতার সমাধান। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এটা সরকারি কাজ। তাদের হাতে কিছু নেই।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার ১২৭ বছরের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজগুলোর তালিকায় কলেজটি অন্যতম। সুশিক্ষা নিতে কলেজটিতে এসে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের। বর্ষাকালে পানি জমে থেকে এক ভয়ানক পরিবেশের সৃষ্টি হয় এ কলেজে। শুধু বর্ষাকালেই নয়, টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই এ কলেজে জলাবদ্ধতার সমস্যা লেগে থাকে। ফলে এ কলেজের বিভিন্ন ভবনের নিচতলা প্রায় অকেজোই থেকে যায়।
গত দুই দিনের বৃষ্টিতেও এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে কলেজটির ক্যাম্পাসে। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ভিক্টোরিয়া কলেজের ধর্মপুর শাখায় গিয়ে দেখা যায়, রসায়ন ভবন থেকে মিলেনিয়াম ভবন ও বিজ্ঞান ভবন ২ এর সামনের রাস্তা, ২নং গেট থেকে কলাভবন রাস্তা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভবনের সামনে থেকে অর্থনীতি ভবন পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে প্রায় হাঁটু সমান পানি।
এছাড়া বিজ্ঞান ভবন-২, মিলিনিয়াম ভবন ও লাইব্রেরি ভবন ও কলাভবনের নিচতলা জলাবদ্ধ। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ভবনগুলোর নিচতলা। একটু বৃষ্টিতেই বিজ্ঞান ভবন-২ এর নিচতলায় পানি জমে আছে। জমে থাকা পানি কালো ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। এতে এডিস মশার লার্ভা থেকে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থীরা।
জলাবদ্ধ ও স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ায় নিচতলা হয়ে ওপরে উঠতে বিড়ম্বনায় পড়ছে শিক্ষার্থীরা। ভবন তিনটির পাশেই রয়েছে গভীর পুকুর। পুকুরের উত্তর দিকে ছাত্রীদের আবাসিক হল, দক্ষিণ দিকে খেলার মাঠ ও পরিত্যক্ত ডোবা ও পূর্বে রেললাইন লাগোয়া কিছু টিনশেড ভবন আর পশ্চিমে এ তিনটি ভবন। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এর ফলে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ঢুকে পড়ে ভবনগুলোতে।
এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এই জলাবদ্ধতার সমস্যা আর নতুন কী। সেই ২০২২ সাল থেকে দেখছি। একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান প্যান্ট তুলে ফেলতে হয়। তাতেও রেহাই মেলে না। আর কষ্ট করে ব্যাঞ্চ পাড়ি দিয়ে ক্লাসে ঢুকলেও পা চুলকায়। এর সমাধান আর হবে না বোধহয়।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত পাঁচ বছর একই দৃশ্য দেখে আসছি। বৃষ্টি হলেই আমাদের ভবনটির নিচের অংশ ডুবে যায়। আমরা ল্যাব করতে পারি না ঠিকভাবে। দেয়ালগুলো আর মেঝের অবস্থা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে।’
ইতিহাস বিভাগের সাবরিনা উর্মি বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই আমাদের কলেজে জলাবদ্ধতা হয়। আর আমাদের ভবনগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। লাইব্রেরিতে বই পড়তে গেলেও খুব অসুবিধায় পড়তে হয়। এগুলো সংস্কার করে রাস্তাগুলো ও মেঝে উঁচু করা দরকার।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, ‘আমাদের কলেজের চারপাশে বাড়িঘরগুলো উঁচু করে করা হয়েছে তাই কলেজ ক্যাম্পাস নিচু হয়ে গিয়েছে। এতদিন আমরা মোটর লাগিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতাম, কিন্তু টানা বৃষ্টি হওয়ায় পুরো কুমিল্লা শহরে জলাবদ্ধতার দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি থামার পর পানি কিছুটা কমলে আমরা দ্রুত এটা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করব।’
আবু জাফর খান আরও বলেন, ‘কলেজের মেঝে উঁচু কলেজ কর্তৃপক্ষ করতে পারবে না, এটা সরকারিভাবে করতে হবে। আমরা প্রকল্প জমা দিয়েছি, এখনো পাস হয়নি। এটা পাস হলে আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।’