গোমতী
নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বিপদ সীমা থেকে পানি নেমে স্বস্তি দিয়েছে
কুমিল্লার মানুষকে। তবে এখনো দুশ্চিন্তায় সেই পানির দিকেই তাকিয়ে আছে বানের
তোড়ে প্লাবিত হওয়া গোমতীর বেরি বাঁধের ভেতরের গ্রামবাসী। এখনো পানি ঘরের
অর্ধেক উচ্চতায়। খাট চেয়ার-টেবিল ড্রেসিং টেবিল, টয়লেট, রান্নাঘর সবই তলিয়ে
আছে পানির নিচে। এই পানি নামলেই বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া শত শত পরিবার যেতে
পারবেন বাড?ি ঘরে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু আবারও ঠিক করে ফিরতে পারবেন ঘরে।
টানা
বৃষ্টি ও ভারতীয় পানির ঢলে গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই বিপদ সীমা অতিক্রম করে
গোমতী নদী। প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। বাড?িঘর ছেড?ে বাঁধের উপর আশ্রয়
নিয়েছে শত শত পরিবার। ছাউনির নিচে বসে এখন পানির দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড?া
উপায় নেই তাদের।
কুমিল্লার সদর উপজেলার চানপুর গ্রামের বাসিন্দা কামাল
হোসেন জানান, গরিব হয় বাঁধের ভেতরেই ঘর নিয়ে বসবাস শুরু করেছিলাম। যেদিন
পানি আসলো স্ত্রী আর শিশু কন্যাকে নিয়ে কোনমতে পারে এসেছি। পরনের কাপড? আর
কয়েকটা প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড?া আর কিছুই হাতে করে আনতে পারেনি। গত ৮ দিন
বাধের উপরেই বসে আছি পানির দিকে তাকিয়ে। কখন পানি নামবে আর ঘরে ফিরবো।
একই
দশা নেহার বেগমের। গত আট দিন ধরে পরিবারের ৬ সদস্যের সবাই এক ছাউনির নিচে
বাঁধের উপর থাকছেন তারা। মাঝেমধ্যে সাঁতরে গিয়ে দেখে আসছেন ডুবে থাকা ঘর।
কিন্তু ঘরে ঢোকার কোন উপায় নেই। পলি জমে ভেতর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে ঘরের
দরজা, ঘরের ভেতরেই এখনো বুক সমান পানি।
নেহার বেগম জানান, মানুষ এনে যে
খাবার দিচ্ছে তাই খেয়ে আছি। টয়লেটে যেতে হয় অনেক দূরে। আর ভালো লাগছে না।
নিজের ঘরে ফিরতে না পারলে শান্তি পাব না। বয়স্ক আর শিশুরা অসুস্থ হয়ে
পড়েছে।
সাম্প্রতিক বন্যায় কুমিল্লার ১৭ টি উপজেলার মধ্যে ১৪ টি উপজেলা
আক্রান্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। সবার আগে বন্যায় ঘরছাড?া
হয়েছেন বেরি বাঁধের ভেতরের থাকা গ্রামবাসী। শত শত পরিবার শিশু ও বয়স্ক
সদস্যদের নিয়ে কোনরকমে আশ্রয় নিয়ে আছেন বাঁধের উপর। গোমতী নদীর পানি বিপদ
সীমার নিচে নেমে আসছে। তবে বাঁধের ভাঙ্গন হওয়া বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে এখনো
লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি।