পয়নিষ্কাশনের
পানি-পুকুর খালের পানি এখন সব বানের পানিতে একাকার। ডুবে গেছে বিশুদ্ধ
খাবার পানির টিউবওয়েল- ধোয়ামোছা ও গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানির উৎস পুকুর
খাল। দূষিত পানির ঢুকছে ঘরে। পা ফেললেই কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানি। তাই
কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলে বন্যাকবলিত চার উপজেলায় দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য
ঝুঁকি। বন্যার পানি দীর্ঘ সময় লোকালয়ে আটকে থাকায় চর্মরোগ, ডায়রিয়া,
কলেরাসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে শিশু ও
বৃদ্ধরা। স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, প্রতিটি ইউনিয়নে চিকিৎসা সেবা দেয়া অব্যাহত
আছে।
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার রাজাপুর গ্রাম। নোয়াখালী সীমান্তবর্তী
গ্রামটি প্লাবিত হয়ে আছে গত দশ দিন। ঘরবাড়ি-খেত খামার সবই পানিবন্দি।
লোকালয় থেকে দীর্ঘ সময় বানের পানি না সরায় বিশুদ্ধ পানি এবং নিরাপদ
স্যানিটেশনের ভাবে সেখানে দেখা দিয়েছে নানা রোগ। ছোট-বড় প্রায় সবাই
চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কেউ ডায়রিয়া-কলেরায়ও আক্রান্ত।
রাজাপুর
গ্রামের বাসিন্দা রেহানা আক্তার জানান, তার ৫ মাস বয়সী মেয়ে মীমের হাতে ছোট
ছোট গোটা উঠেছে। এখন এগুলা আরো বাড়ছে। ঘরে সবারই হাতে পায়ে এরকম গোটা।
পানিবন্দী হওয়ার পর থেকে এগুলো ছড়াচ্ছে। গায়ে পানি লাগার ভয়ে এখন কেউ ঘর
থেকেও বের হতে চায় না। একই এলাকার বাসিন্দা রাকিব জানান, আমি দিনমজুর কৃষি
কাজ করি। আমার হতে পায়েও এখন রোগ। আমার কিছু করার নাই – পেটের দায়ে পানিতে
কাজ করতেই হবে। আর কবে পানি নামবে তারও ঠিক নাই। এলাকার বয়োজেষ্ঠ্য
মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, আমাদের এলাকায় এখন ওষুধ প্রয়োজন। মেডিকেল টীম
দরকার। এলাকা পানিবন্দী থাকার কারনে কোন ডাক্তারের কাছেও যেতে পারি না। কেউ
কেউ ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছে।
জেলার শেষ সীমানায় গ্রামটি হওয়ায়
সেখানে পৌঁছাচ্ছে না ত্রান। দু’একটি সংগঠন যে খাবার দিয়েছে-তাও অপ্রতুল।
পর্যাপ্ত ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির জন্য বুক সমান পানি ঠেলে যেতে হচ্ছে
দূর-দূরান্তে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সাকিব জানান, আমরা কিছু ত্রান সংগ্রহ
করে এলাকাবাসীকে দিচ্ছি। কিন্তু এটা খুবই অপর্যাপ্ত। আমরা সকলের কাছে
আহ্বান করছি- এখানেই যারাই সহযোগিতা করতে আসবেন তারা যেন চিকিৎসক এবং ওষুধ
নিয়ে আসেন।
এদিকে বৃহষ্পতিবার গ্রামটিতে একটি মেডিকেল টীম পাঠানো হয়েছে
বলে জানান লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মর্কা নাজিয়া বিনতে আলম। তিনি জানান,
সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের টীম গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য
বিভাগের তথ্য মতে, বন্যা কবলিত এলাকায় এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নানান
পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে। একই সাথে রয়েছে সাপে কাটার ভয়ও। তবে প্রতিটি
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্পিডবোট -নৌকা থেকে থেকে সেবা দেয়ার চেষ্টা
চলছে। কুমিল্লা জেলায় মোট ২৭০ টি টীম কাজ করছে।
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল
সার্জন মোঃ নাজমুল আলম জানান, বন্যার পরবর্তী ও চলাকালে যে ডায়রিয়া তা
বিপদের বিষয়। তবে এখনো ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনে। কিন্তু একটি
প্রাদুর্ভাবের আশংকা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পানিবাহিত খোসপাঁচড়া হয়েছে বলে
রিপোর্ট পাচ্ছি। একই সাথে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে। আমরা
সবাইকে সতর্ক করছি যেন সবাই বিশুদ্ধ পানি পান করেন। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে
খাবার খান। এবং সাপে কাটলে হাসপাতালে যান।
তিনি আরো জানান, এখন আশ্রয়
কেন্দ্রে যারা আছেন তারা অনেকে একসাথে আছে- যে কারণে ছোঁয়াচে রোগ রাড়তে
পারে। যে কারণে সবাইকে কিছুটা আলাদা আলাদা হয়ে থাকতে হবে। পচা বাসি খাবার
একবারেই খাওয়া যাবে না।
কুমিল্লা জেলায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ২৬ হাজার। আশ্রয়কেন্দ্রে আছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।