‘অনেক
দিন ধইরা ঘরের মালামাল সব পানির তলে। প্রথম দিকে একটানা কয়দিনের বৃষ্টিতে
এক বন্যার পানি হইছে; এরপর আবার ভাঙ্গা পড়ছে। ঘরের মালছামান সব ফালাইয়া এক
কাপড়ে ঘর থাইক্যা বাইর হইছি। এহন পানি ঘর থাইক্যা নাইম্যা উডানে আইছে।
কিন্তু ঘরের মালামাল সব নষ্ট হইয়া গেছে। ঘরের ভিতর পইল পড়ছে (পলি মাটির
স্তুপ)। এইগুলা কেমনে পরিস্কার করমু; পানি কমার পর ঘরটাও দেহি কাইত হইয়া
গেছে। এহন আমি কি করমু কিছুই বুঝতে পারতাছি না; আমরা সব শেষ হইয়া গেছে, আমি
পথে বইসা গেলাম।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার বুড়িচং
উপজেলার মহিষমারা গ্রামের ফুল মিয়া। বন্যার পানি কিছুটা কমার পর রবিবার
সকালে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। ঘর থেকে পানি নামলেও উঠুনে এখনো হাটু পানি। বাড়ি
এসেই ঘরের অবস্থা দেখে কান্নায় ভিজে উঠে তার ফুল মিয়ার। ঘরের ভেতর যা কিছু
ছিলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। আধা হাত পলি জমেছে ঘরে। পানির ধাক্কায় ভিটি দুর্বল
হয়ে ঘর কাত হয়ে যাচ্ছে। মেরামত করা ছাড়া আর উপায় নাই।
তিনি বলেন,
বন্যা ও বৃষ্টির পানির কারণে আজ প্রায় ১৫/১৬ দিন ধরে বাড়ি ছাড়া। যেভাবে
ধীরে ধীরে পানি কমছে; মনে হয় না আরো দুই সপ্তাহের আগে ঘরে উঠতে পারবো।
গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গেছে আজ ১৪/১৫ দিন। শুধু পরনের কাপড়গুলো নিয়েই ঘর ছেড়েছি।
ফিরে এসে দেখি ঘর আমার যায় যায়, পলি মাটিতে ভরা।
শুধু ফুল মিয়াই নন;
কুমিল্লার বন্যা কবলিত ১৪ উপজেলার যেসব এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে; সেসব
এলাকাতেই ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত। বানের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের
আসবাবপত্র, পানি কমলেও ঘরে ঢুকতে পারছে না বানভাসি মানুষ। ঘরের ভেতর পলি
জমে মেঝে আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। বানভাসি মানুষের এখন মরার উপর খাঁড়ার
ঘা।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লাতে বন্যা কবলিত হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ
মানুষ। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছে প্রায় এক লাখ মানুষ। লোকালয় থেকে পানি ধীরে
ধীরে নামতে শুরু করলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়ছে। বন্যার পানি অতি ধীরে
নামতে থাকায় মৎস্য ও কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী,
কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে সাড়ে আটশ কোটি টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে মোট
ক্ষতির পরিমাণও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
গোমতির প্লাবনে বন্যা কবলিত
বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া দেবীদ্বার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির
দিকে আসলেও ভোগান্তি কমেনি সাধারণ মানুষের৷ কারো কারো বাড়ি ঘরে পানি এখনো
কোমর সমান।
এদিকে চৌদ্দগ্রাম নাঙ্গলকোট লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার
বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকায় সেখানে দেখা দিয়েছে
নানান রোগের প্রাদুর্ভাব।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ
আবেদ আলী বলেন, বন্যায় অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, ভেঙ্গে গেছে।
অনেকের গোয়ালের গরু মারা গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। সরকারি অনেক
অবকাঠামো বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের বন্যায় ক্ষতি আমাদের
ধারনার থেকে বেশিও হতে পারে। এখনই নিশ্চিতভাবে আমরা কোনও পরিসংখ্যান করিনি।
দুর্যোগ শেষ হলে আমরা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে
তা নিরূপণ করবো।