আক্তার
হোসেন( ৫০) দুই ছেলে এক মেয়ে স্ত্রী নিয়ে পাঁচ জনের সংসার। ভালই কাটছিল
দিন ‘তিল তিল করে গড়া ২৫ বছরের কষ্টার্জিত মাছের খামার এবারের বন্যায় চোখের
সামনে নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। এখন আমাকে পথে বসতে হবে। আমার আর কিছুই রইল
না। এই ক্ষত কীভাবে শুকাবে জানি না। ও আমার আল্লাহ , এত বড় শাস্তি দিলে!
এমন হবে জীবনে কখনো কল্পনাও করিনি।’ এসব কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নে মৎস্যচাষি আক্তার হোসেন ।
আবেগের আপ্লুত কন্ঠে
আরও বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছেন।
তার ফিশারী থেকে ঢাকা ,চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাছ যেত। ছোট মাছ
থেকে শুরু করে সব প্রজাতির মাছ উৎপাদন করা হতো ফিশারী থেকে। এ খামারে অন্তত
৫/৭ জন শ্রমিক কাজ করতেন। কয়েক মাসে পর পর এই খামার থেকে লাখ টাকার মাছ
বিক্রি হতো। আকস্মিক বন্যায় ৭টি পুকুর ডুবে গিয়ে সব মাছ চলে যায়।
শশীদল
ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর (ভাল্লুক) গ্রামের মৃত্যু সুলতান আহমদ এর ছেলে মৎস্য
চাষী আক্তার হোসেন আরো বলেন,আমার জীবনের সমস্ত কিছুই ফিশারীতে বিনিয়োগ
করেছি এখন আমার বলতে আর কিছুই রহিলনা। গত বছর ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ফিশারী
গুলি ইজারা নিয়েছিলাম। এবং এ বছর এই ৭ টি পুকুরে আমি প্রায় ৮৭ লাখ টাকার
মাছের খাবার দিয়েছি। সবকিছুই ধার দেনা করে চলছিল। পুকুরের মাছও বড় হচ্ছিল
আগামী নভেম্বরে মাছ বিক্রি করে খাবারের টাকা বিভিন্ন এনজিও থেকে তোলা টাকা
সুদ করার কথা ছিল। কিন্তু এবারের বন্যায় আমাদের সব প্রজেক্টের মাছ জোয়ারের
পানিতে ভেসে গেছে। এতে করে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা হবে।
এ অবস্থায় আমি কীভাবে এ লোনগুলো পরিশোধ করব তা বুঝতে পারছি না। তাই
সরকারের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়াও আক্তার হোসেন এর মত ৩০০
শতাধিক মৎস্য চাষিদের পুকুর ভেসে গিয়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে
জানান উপজেলা মৎস্য অফিসার।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার জয় বনিক
জানান, এ বন্যায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার প্রায় সব কয়টি পুকুর প্লাবিত হয়ে
যায়। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষীদের। আমাদের মৎস্য উপদেষ্টা কুমিল্লায়
এসে আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন অচিরে মৎস্য চাষীদের ক্ষতির পরিমাণ লিপিবদ্ধ
করে তাদের পুকুরের পুনা ব্যবস্থা করা হবে। এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে।
এ
বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স,ম, আজাহারুল ইসলাম বলেন,
ব্রাহ্মণপাড়ায় অনেক মাছচাষি রয়েছেন। বন্যায় সব পুকুর ভেসে গেছে। মাছচাষিদের
অনেক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন তালিকা চাওয়া হবে, তখন আমরা
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ তালিকায় তাদের নাম দেব।