কুমিল্লার
দেবিদ্বার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার মো. ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে
অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতাসহ পৌরসভার জমি কেনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেকে
বাঁচাতে ছুটি ছাড়া দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। এছাড়াও সম্প্রতি
বদলী হতে তিনি দৌড়ঝাঁপ করছেন বলেও জানা গেছে।
পৌর অফিস ও স্থানীয়
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি দেবিদ্বারে পৌর সচিব হিসেবে
যোগদান করেন মো. ফখরুল ইসলাম। মামলা জটিলতার কারনে নির্বাচিত মেয়র না থাকায়
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতেন উপজেলা নির্বাহী
অফিসারগণ। প্রশাসকদের সরলতা ও বিশ্বস্ততার সুযোগে মো. ফখরুল ইসলাম পৌরসভায়
নিজের অনুগত কর্মচারীদের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে নিজের একক
আধিপত্য বিস্তার করেন। এরপর তিনি ওই সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় পৌরসভার বিভিন্ন
কেনাকাটায় অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, মশার ওষুধ ক্রয়, লাইট
ক্রয়, পৌরসভার আসবাবপত্র ক্রয়সহ কেনাকাটায় ভুয়া ভাউচারে বিপুল পরিমাণ অর্থ
হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও তিনি পৌরসভার ময়লা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য
নিয়ম বহিরভুতভাবে নিজের পছন্দের এইড বাংলাদেশ নামের একটি কোম্পানী বিনা
টেন্ডারে কাজ দিয়ে দেন। সেখানে ১৬জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করার কথা থাকলেও
কাজ করছেন ১০জন কর্মী। অথচ ১৬ জনের বেতন হিসেবে ২ লক্ষ ৩০ হাজার মাসিক
উত্তোলন করে বাকি ৬ জনের টাকা আত্মসাৎ করছেন সচিব। এছাড়াও প্রতিজনের বেতন
১৫ থেকে ১২ হাজারের মধ্যে হলেও সচিব তাদরকে ৯ থেকে ১২ হাজারের মধ্যে তাদের
বেতন দেন। এ খাত থেকেও টাকা আত্মসাৎ করেন সচিব।
সরকারী নিয়ম অনুযায়ী
একই অফিসে তিন বছরের অধিক সময়ে চাকুরী করার কথা না থাকলেও তিনি ওই পদে গত
সাড়ে ৬ বছর ধরে বহাল থেকে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। তাকে শেল্টার
দিতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২০ সালে পৌরসভার
জন্য উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের বাসিন্দা নানু মিয়ার থেকে ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার
টাকার মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। অথচ ওই জমির মূল্য হিসেবে পৌরসভার
ব্যাংক হিসাব থেকে ২৮লক্ষ ৩৮হাজার ৭৩৫ জমির মালেকের একাউন্টে জমা করা হয়।
এর আগে জমির মালিক নানু মিয়া থেকে একটি স্বাক্ষরিত খালি চেক দালালদের
মাধ্যমে পৌর সচিব নিয়ে নেন । পরে একই দিন জমির মালিকের হিসাব নম্বর থেকে ওই
খালি চেক দিয়ে ৯লক্ষ ৬১ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন সচিব সহ তার দালাল
চক্র।
সরকার পতনের পর জমি বিক্রেতার ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের
ব্যাংক হিসাব থেকে ৯লক্ষ ৬১ হাজার টাকা উত্তোলন ও ওই টাকা তাদের ফেরত দিতে
চাপ প্রয়োগ করেন। এতে পৌর সচিব মোঃ ফখরুল ইসলাম অফিস থেকে আত্মগোপনে চলে
যায় এবং আত্মগোপনে থেকেই পৌরসভার কর আদায়কারী রাকিবুল ইসলাম ও সার্ভেয়ার
সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে দুই লক্ষ টাকা ফেরত দেন তাদের। এরপর পৌর মেয়রের
অপসারনের পর গত ১৯ আগস্ট পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন উপজেলা সহকারী
কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম। ওই দিন পৌর সচিব মোঃ ফখরুল অফিসে উপস্থিত
হন। পরদির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা পৌরসভার অনিয়ম ও দুনীতি নিয়ে পৌর সচিবের
সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলে তিনি আবারো পালিয়ে যান। এরপর থেকে ছুটি ছাড়া
দীঘদিন অফিসে তিনি অনুপস্থিত থাকার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে অফিসে আসেন
তিনি, বিকালে ছাত্ররা পৌর কার্যালয়ে গিয়ে সচিবের সাথে স্বাক্ষাত করেন এবং
বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীতির বিষয়ে তার কাছে জানতে তিনি পৌর প্রশাসকের
অনুমিক্রমে ৪ সেপ্টেম্বর তথ্য প্রদান করার অজুহাতে রাতেই দেবিদ্বার ছেড়ে
পালিয়ে যান। এ বিষয়ে পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ রায়হানুল
ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পৌর সচিব ছুটিতে আছেন। অথচ পৌরসভায়
গিয়ে সচিবের ছুটির কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তবে পৌর প্রধান সহকারীর
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটি ছুটির
আবেদন পাঠান তিনি।
এ বিষয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম ফোন
করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, আমি বর্তমানে ছুটিতে আছি, আমি অসুস্থ এখন
কথা বলতে পারব না, পরে কথা বলব।
এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী
কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া
যায়নি, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।