এবারের
বন্যায় কুমিল্লায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে
পড়েছে অনেক সেতু ও কালভার্ট। সব মিলিয়ে জেলাজুড়ে এক হাজার ২ শ কিলোমিটারেরও
বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে গ্রামীণ জনপদে কিছু
কিছু সড়কের অবস্থা একেবারেই নাজুক আবার অনেক এলাকার সড়ক একেবারে বিলিন হয়ে
গেছে। বন্যার পানি যেসব এলাকাতেই কমতে শুরু করেছে; সেসব এলাকাতেই ভেসে উঠছে
সড়কের ভয়াবহ ক্ষতির চিত্র। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা
চৌদ্দগ্রাম অংশে বিশাল এলাকাজুড়েও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব স্থানে ঝুঁকি
নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়াও লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট
পৌরসভার ১ শ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন পৌর
কর্তৃপক্ষ।
এলজিইডি ও সওজের কাছ থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী
কুমিল্লাজুড়ে বন্যায় ১১ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু
কিছু সড়ক একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও জেলাজুড়ে নষ্ট হয়েছে
৩২টি সেতু ও কালভার্ট। সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা
প্রকাশ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন
উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। এরপর সময় যতো গড়িয়েছে বন্যার ভয়াবহতাও
ততোই বেড়েছে। এরই মধ্যে ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় ভেঙ্গে যায় গোমতী নদীর
বাঁধ। এরপর একে একে জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪ উপজেলায়ই প্লাবিত হয়ে যায়।
বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি ও স্থাপনা তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোনো কোনো সড়ক হাঁটু থেকে বুক সমান পানিতে তলিয়ে
ছিল। টানা ১০/১২ দিনের বন্যার পর অনেক জায়গাতেই সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে।
ভেসে উঠেছে বন্যার ক্ষত।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুড়িচং,
ব্রাহ্মণপাড়া ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সড়কগুলো। এছাড়া বন্যাকবলিত জেলার,
নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, চান্দিনা, লালমাই, সদর দক্ষিণ, আদর্শ
সদর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলার সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বেশি ক্ষতির মুখে
পড়েছে বুড়িচং উপজেলার গোমতী নদীর ভাঙ্গনের মুখে থাকা এলাকার সড়কগুলো। নদীর
পানির তীব্র স্রোতের কারণে বেশির ভাগ সড়কের মাঝখানে বিশাল বিশাল পুকুর
আকৃতির গর্তও দেখা গেছে।
গোমতীর ভাঙ্গনের মুখে থাকা বুড়বুড়িয়া, নানুয়ার
বাজার, বেড়াজাল, মহিষমারাসহ আশপাশের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সড়কযোগাযোগ
ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। বানের তোড়ে সড়কের পাশের বড় বড় গাছ উপড়ে
গেছে। সড়কের মাঝখানে বিশাল আকৃতির গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার সড়কগুলো
জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে মানুষকে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
এছাড়াও বুড়িচং উপজেলার ভরাসার, ইছাপুরা, কালিকাপুর, ভবানীপুর সড়ক ভেঙ্গে
খাদে পরিণত হয়েছে। এ উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক ঢলের পানিতে বিলীন হয়ে
গেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সড়কগুলোওত। এ উপজেলার
বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সড়ক বন্যার খরস্রোতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ
রয়েছে। এছাড়াও নাঙ্গলকোট-বাঙ্গড্ডা-বাগমারা সড়কের অবস্থাও ভয়াবহ।
মনোহরগঞ্জ-শান্তির বাজার, চিতোষী-হাসনাবাদ, তুঘুরিয়া-উত্তর হাওলাসহ লাকসাম,
মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটের প্রায় প্রতিটি সড়কের অবস্থাই বেহাল।
এলজিইডির
ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা অনুযায়ী এ পর্যন্ত জেলার মেঘনা উপজেলায় ২৩
কিলোমিটার সড়ক ও দুটি ব্রিজ/কালভার্ট, হোমনা উপজেলায় ৪২.৬ কিলোমিটার সড়ক ও
১টি ব্রিজ/কালভার্ট, দাউদকান্দিতে ৭ কিলোমিটার সড়ক ও একটি ব্রিজ/কালভার্ট,
তিতাসে ১৯ কিলোমিটার সড়ক ও একটি ব্রিজ/কালভার্ট, মুরাদনগরে ৬.২১ কিলোমিটার
সড়ক, দেবীদ্বারে ৭০.১০ কিলোমিটার সড়ক, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৭০.৬ কিলোমিটার সড়ক ও
৬টি ব্রিজ/কালভার্ট, বুড়িচংয়ে ১৫০.৯কিলোমিটার সড়ক, আদর্শ সদর উপজেলায় ২৪.৪
কিলোমিটার সড়ক, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৭৯.২ কিলোমিটার সড়ক ও দুটি
ব্রিজ/কালভার্ট, লালমাই উপজেলায়৫৯.৮কিলোমিটার সড়ক, বরুড়ায় ১১৯.৭ কিলোমিটার
সড়ক, লাকসামে ১২৫.৫কিলোমিটার সড়ক, মনোহরগঞ্জে ৭৮.৮ কিলোমিটার সড়ক,
চৌদ্দগ্রামে ১৯৩.১৫ কিলোমিটার সড়ক ও ৯টি ব্রিজ/কালভার্ট, নাঙ্গলকোটে ৬৬.৬
কিলোমিটার সড়ক ও ১০টি ব্রিজ/কালভার্ট, চান্দিনায় ১০.৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতি
হয়েছে। সব মিলিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১ হাজার ৬৪ কিলোমিটার
সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, বন্যার কারণে কুমিল্লার
অসংখ্য সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সটিক পরিমাণ
নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। পানি কমতে শুরু করায় প্রতিদিনই ভেসে উঠছে নতুন নতুন
এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, কালভার্ট ও ব্রিজ।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত
এসব সড়কের অনেক স্থানে সোল্ডার ধসে গেছে, অনেক স্থানে সড়ক ওয়াশআউট হয়েগেছে।
ব্রিজ কালভার্টের এপ্রোচ ওয়াশ আউট হয়ে গেছে এবং কালভার্ট দেবে গেছে। সড়কে
পটহোল তৈরি হয়েছে। এগুলো দ্রুত সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অপরদিকে
সড়ক ও জনপথ (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, বন্যায় কুমিল্লায়
সওজের ১০০ কিলো মিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের
সকল রাস্তা সচল আছে। যান চলাচল করছে। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত
সড়কগুলো মেরামত করার।