উজানের ঢল আর ভারি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্মরণকালের এ বন্যার শুরু থেকেই মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এখানকার বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী।
উপজেলা প্রশাসন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা সেনাবাহিনীর এ মহৎ কাজে সহযোগিতা করে আসছেন।
জানা গেছে, বর্তমানে বিশুদ্ধ পানি, চাল, ডাল, তেল, আলু, আটা পেঁয়াজসহ রান্না করে খাওয়ার উপযোগী ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন সেনা সদস্যরা। ইতিমধ্যে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৭৫টি গ্রামের ১৪০টি গ্রামে অর্ধলক্ষ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
বন্যার শুরুতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানভাসি মানুষজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় সেনা সদস্যরা।
পরে আশ্রয় কেন্দ্র ও বাড়িতে থাকা বন্যার্তদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ, শুকনো খাবার হিসেবে বিস্কুট, চিড়া, মুড়ি, গুঁড়, খেজুর, মোমবাতি, গ্যাস লাইটার, খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল টিমের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ওষুধ বিতরণ করা হয়।
অন্যদিকে, গবাদিপশুর জন্য বিনামূল্যে গোখাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বন্যার পানি সহজ নির্গমনের জন্য নদী ও খালের বাঁধ কেটে দেয়া ও নিষিদ্ধ জাল অপসারণে সহযোগিতা করে সেনা সদস্যরা।
ত্রাণ সহায়তা ছাড়াও সম্প্রতি বন্যার সময় উপজেলার লক্ষনপুরে বিদ্যুতায়িত রোগিকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে কুমিল্লা সিএমএইচে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে ওই রোগীর প্রাণ বেঁচে যায়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আবু সাদমান সৈকত জানান, বন্যার শুরু থেকে আমরা সাধ্যমত বন্যার্ত মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। উপজেলা প্রশাসন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা আমাদের সহযোগিতা করছেন। সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার ইকবাল হোসেন, সার্জেন্ট সাহাবুলসহ অন্য সেনা সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরিফুর রহমান জানান, উপজেলা পর্যায়ে ৬০ জন এবং প্রত্যেক ইউনিয়নে ৫০ জন ছাত্র ত্রাণ তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক গ্রামে একজন আলেম, একজন শিক্ষক ও একজন ছাত্র প্রতিনিধির মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার পরিবারের মাঝে প্যাকেটজাত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ হচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য হারুনুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেন, নাইমুর রহমান, আশরাফুল আলম, তানজিদ হোসেনসহ অন্যান্য সদস্যরা এ কাজে তৎপর রয়েছেন।
মনোহরগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহবায়ক ও সাবেক সভাপতি মোঃ হুমায়ুন কবির মানিক জানান, ভয়াবহ বন্যার দুর্যোগ মুহূর্তে উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে যে অবদান রেখেছেন তা অতুলনীয়। তাদের প্রতি মনোহরগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা বলেন, আমাদের এ এলাকা জলাঞ্চল হওয়ায় পানি আস্তে নামছে। আমরা শুরু থেকে সাধ্যমত বন্যায় দুর্গত মানুষদের সহযোগিতায় কাজ করে আসছি। তাদের খাবার, পোষাক ও ওষুধের ব্যবস্থা করা সহ প্রত্যেকটি কার্যক্রম উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়সহ সকলের সহযোগিতায় করে আসছি। আমরা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা কিছু শিশু খাদ্য ও গো খাদ্য পেয়েছি। সেগুলো আমরা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করেছি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও অনেক সহায়তা পেয়েছি। বিশেষ করে খাদ্য সহায়তা, নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র সহায়তা পেয়েছি। এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ পূণর্বাসন। আগামী কিছুদিনের মধ্যে বন্যার্তরা ঘরে ফিরে যেতে পারবেন। এখন তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা এবং তারা কি ধরনের সহযোগিতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সে বিষয়ে আমরা ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক আমরা পুনর্বাসন কাজ চালানো হবে।