নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লা ক্লাবকে বিগত দিনে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করা
হয়েছিলো। ক্লাবের সকল সম্পত্তি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হতো। ভিন্নমতের
কাউকে কথা বলতে দেওয়া হতো না। কথা বলার সময় অনেকের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার
ঘটনাও ঘটেছে। এতোদিন এই ক্লাবে যারা স্বৈরাচার রাজনীতির চর্চা করতো তাদের
চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লাক্লাবের
অতিরিক্ত সাধারণ সভায় এ দাবি জানান ক্লাব সদস্যরা। এছাড়াও গত ৫ই আগস্ট
ক্লাবের সামনে যাদের গাড়ি পোড়ানো হয়েছে; সেসব গাড়ি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে এমন স্পর্শকাতর
অভিযোগও তুলেন বক্তারা। এসব গাড়ি কাদের- তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের
জন্য ক্লাব সভাপতি জেলা প্রশাসকের কাছে জোর দাবি জানান তারা।
সভায়
সদস্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, কুমিল্লা ক্লাবের বিগত কয়েকটি কমিটির
তোষামোদির ফলস্বরূপ ক্লাব যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ তাদেরকেই করতে
হবে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
সভায় কুমিল্লা ক্লাবের কার্যকরী
কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। গঠনতন্ত্র মোতাবেক নতুন তিন সদস্যের এডহক কমিটি গঠন
করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। গতকাল
শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও
কুমিল্লা ক্লাবের সভাপতি মোঃ আমিরুল কায়ছার। সভায় কুমিল্লা ক্লাবের
সম্মানিত সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে ক্লাবের সভাপতি জেলা
প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার জানান, পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে কুমিল্লা
ক্লাবের নতুন তিন সদস্যের এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে আহ্বায়ক
কমিটির নাম প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরো জানান, কুমিল্লা ক্লাবে যে
ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তা পুনঃ মেরামত ও সদস্যদের অভিমতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র
পূর্ণ সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে দুটি আলাদা উপ- কমিটি গঠন করা হবে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহ্বায়ক কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত
করে কার্যকরী কমিটি নির্বাচন করবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কুমিল্লা
ক্লাবের সম্মানিত সদস্য কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিনুর
রশিদ ইয়াছিন তার বক্তব্যে বলেন, কুমিল্লা ক্লাবের অনেক সদস্যই আছে যারা
বিগত সময়ে ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অংশ নিতে পারেননি। নানান
প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। অনেকের মাধ্যমে শুনেছি বক্তব্যের মাধ্যমে
মাইকও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই এই ক্লাব সকল সদস্যের জন্য হোক।
ক্লাবের কার্যক্রম যেন শুধুমাত্র ক্লাবের মত করেই চলে এটাই আমাদের আহ্বান
থাকবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক
পঙ্কজ বড়ুয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরিজ, বিশিষ্টজন
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক দুলাল, জাতীয় পার্টি নেতা এয়ার আহমেদ সেলিম,
বিশিষ্ট চিকিৎসক মোসলেউদ্দিন আহমেদ, ডা. সহিদ উল্লাহ, বিশিষ্ট আইনজীবী
গোলাম ফারুক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব
জসিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, ক্রীড়া ও
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বদরুল হুদা জেনুসহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য গত পাঁচ
ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন কুমিল্লা ক্লাবে আগুন দেয় এবং
ধ্বংসযজ্ঞ চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে পুরো ক্লাবটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
এছাড়া পাঁচ ই আগস্টের পর থেকে ক্লাবের কোন কার্যক্রমই চলতে দেখা যায়নি। তাই
ক্লাবের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য এই অতিরিক্ত সাধারণ
সভা আহ্বান করা হয়।
অতিরিক্ত সাধারণ সভা আয়োজক কমিটির সদস্য এডভোকেট
শহিদুল হক স্বপনের সঞ্চালনা ও উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন
ইজিএম আয়োজক রইস আব্দুর রউফ, মহিউদ্দিন আহমেদ, এফএএম শাহরিয়ার, আহমেদ সোয়েব
সোহেল, জামিল আহমেদ খন্দকার।
অতিরিক্ত সাধারণ সভায় বিএনপি নেতা সাজ্জাদ
হোসেন বলেন, যারা বিগত স্বৈরাচার সরকারের সাথে ছিলো তাদেরকে আমরা ক্লাব
পরিচালনায় চাই না। বিগত কমিটির সময় এই ক্লাবকে একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ে
পরিনত করা হয়েছিলো। রাজনৈতিক কাজে ক্লাবের সকল সম্পত্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
আমরা এমন আর চাই না। আমরা বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি-
তারা বলেছে ক্লাবকে ক্লাবের মতই পরিচালিত করতে চান তারা।
সভায় বক্তব্যে
বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির বলেন, যারা বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়
শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালিয়েছে তাদের গাড়ীগুলোই কুমিল্লা ক্লাবে রাখা
ছিলো- তাই বিক্ষুব্ধরা এসব গাড়ী ও ক্লাবে আগুন দিয়েছে। ওই গাড়ীগুলো ক্লাবের
কোন সদস্যদের ছিলো তা জানাতে হবে। যারা এই ক্লাবে স্বৈরাচার রাজনীতির
চর্চা করতো তাদের চিহ্নিত করতে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।