বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে রাষ্ট্র সংস্কার অপরিহার্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের প্রবল আগ্রহ দেখা দিয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশনও ঘোষণা করেছে। কমিশন ইতোমধ্যে তাদের কাজও শুরু করেছে। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এর মধ্যে অন্যতম। সংস্কারের পক্ষে আন্তর্জাতিক মহল অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার নিশ্চিত করতে জোরালো তাগিদ দিয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি মার্কিন সিনেটররা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জনগণের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রবল দাবি ওঠে। সেই সঙ্গে সংস্কারের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা শুরু হয়। রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজও একমত পোষণ করেছে। যদিও রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার একটি জটিল ও কঠিন কাজ। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেহেতু দেশের সব পক্ষই একমত। জনগণও রাষ্ট্র সংস্কার প্রত্যাশা করে। আন্তর্জাতিকভাবেও এর একটা তাগিদ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তৈরির জন্য একটি পথরেখা ঘোষণা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সার্বিক সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরা নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে। এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন, রাষ্ট্র পুনর্র্নিমাণ তাগিদের ঐক্য বন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে।
বর্তমানে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আশার বাণী কিছুটা হলেও সঞ্চার হয়েছে। সবার কথা আগে দেশ সংস্কার, এরপর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হোক। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যে কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে তার কর্মকাঠামো আগামী ১ অক্টোবর চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করা হবে এবং তিন মাসের মধ্যে কমিশনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শ্রমের সমমজুরির অধিকারে গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করি। শুধু কমিশন করলেই এসব সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি বলে মনে করি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উপযুক্ত ব্যক্তিকে যথার্থ দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। এ দেশের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ লোকের জীবন-জীবিকা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। শ্রমজীবী মানুষও প্রায় ২ কোটি। এদের কথা মাথায় নিয়ে সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে হবে।
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তিন বেলা ভাতের অধিকার নিশ্চিতে তাদের জন্য সংস্কারকাজ করতে হবে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়নের রোডম্যাপ হবে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। সব শ্রেণির মানুষের অধিকারের কথা চিন্তা করে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তৈরি এবং সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারে তৃণমূলের মানুষের প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করবে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা থাকতে হবে জনসাধারণের। দেশের প্রতিটি স্তরে যে বৈষম্য তা দূর করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার শুরু করলেও পরবর্তী সরকার যাতে এ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে, সে জন্য একটি টেকসই সমাধান প্রয়োজন।