গত
মার্চ মাস থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক উপাচার্যের
দ্বন্দ্বে শিক্ষকদের তিন দফায় ক্লাস বর্জনসহ প্রায় দুই মাস বিশ্ববিদ্যালয়
ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ থাকে। কার্যক্রম বন্ধ থাকা অবস্থায় ২৩ জুন
'শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শিক্ষক সমিতি রিকভারি প্ল্যান করবে' বলে
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য
দিলেও এখনো সেরকম কোনো প্ল্যান করা হয় নি বলে জানান তিনি। তবে 'দ্রুতই
রিকভারি প্ল্যানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এসব বিষয় নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের।
শিক্ষার্থীদের
সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষক-উপাচার্য দ্বন্দ্বসহ দেশের ছাত্র-জনতার
গণঅভ্যুত্থানের ফলে প্রায় ৬ মাস পিছিয়ে পরেছে শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় চার
মাসের সেমিস্টার পাশাপাশি দ্রুত গতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হলে তাদের
যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কিছুটা হলেও কাটবে।
এই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, 'আমরা
বর্তমানে তৃতীয় সেমিস্টারে আছি। আমরা যদি একটু আমাদের একাডেমিক যে
ক্যালেন্ডার সে অনুযায়ী হিসাব করি তাহলে আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে ষষ্ঠ
সেমিস্টার শেষ করে ফেলার কথা। এখন যদি সেটি করতে হয়, তাহলে শিক্ষক সমিতির
উচিত হবে শিক্ষকদেরকে ওরকমভাবে নির্দেশনা দেওয়া যেন চার মাসের মধ্যে
সেমিস্টারগুলো শেষ করা যায় তাহলেই আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পুষিয়ে ফেলা
সম্ভব বলে মনে করছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন
টেকনোলজিস বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী তৌসিফ বিন পারভেজ বলেন,
'আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান আমাদেরকে যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার আগামী
সেমিস্টারের জন্য দিয়েছেন সেটি অনুযায়ী আমরা জানুয়ারিতেই সামনের সেমিস্টারে
বসতে পারবো৷ এমন হলে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছু লাঘব হবে, পাশাপাশি
এমন উদ্যোগ আসলে সবগুলো বিভাগে নেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।'
এ
বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'আসলে রিকভারি
প্ল্যানটি করতে হলে একটি সাধারণ সভা আয়োজন করতে হবে। ৫ই আগস্ট এরপরে দেশের
পটপরিবর্তন হয়েছে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন উপাচার্য না থাকায় যে
অভিভাবক শূন্যতা ছিল। সেটির ফলে আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে শীঘ্রই
আমরা একটি সাধারণ সভা আয়োজন করে উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে
শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করব।'
শিক্ষার্থীদের
দাবি চার মাসের সেমিস্টার করার এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির মতামত কি হতে পারে
জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আসলে চার মাসের সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা শুধু
সার্টিফিকেট পাবে কিন্তু আসলে তারা ভালোভাবে কিছু শিখতে পারবে না। অনেক এমন
বিভাগ আছে যেগুলোতে চারমাসে সেমিস্টার শেষ করাটা সম্ভব না। তবে যদি
রিকভারি প্ল্যান হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য শুধু এই প্ল্যান গ্রহণ করা হয়
তাহলে তা করা যেতে পারে। তবে শিক্ষক সমিতি এখনো এই বিষয়ে তেমন কোন কিছু
ভাবেনি। আমরা সাধারণ সভা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর উপাচার্য স্যারের সাথে এ
নিয়ে আলোচনা করব।'
উল্লেখ্য, 'চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে
শিক্ষক-উপাচার্য দ্বন্দ্ব, ইদের ছুটি, কোটা বাতিলের আন্দোলন ও সাম্প্রতিক
বন্যা পরিস্থিতি মিলিয়ে প্রায় ১৫৬ দিন বন্ধ ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।'