গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ থামছেই না। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই অস্থিরতা। গার্মেন্টস শ্রমিক, মালিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনেও নেওয়া হয়েছে।
এর পরও থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ। এমন অবস্থায় গত সোমবার আশুলিয়ায় কয়েক হাজার শ্রমিকের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক মারা যান। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক, তার মধ্যেও কয়েকজন রয়েছেন গুলিবিদ্ধ।
বিক্ষোভ হয়েছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের ভালুকায়। আশুলিয়ায় মঙ্গলবারও বিক্ষোভ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গার্মেন্টসশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, এমনকি শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও মনে করছেন, আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের উসকানি রয়েছে।
তা না হলে সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও এমন অস্থিরতা কেন? পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সোমবার আশুলিয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে কাউসার নামের এক শ্রমিক নিহত হন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একজোট হয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। একই দিনে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার আর অ্যান্ড জি (বিডি) গার্মেন্টসের শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
সোমবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জনি টেক্সটাইল কারখানা অবৈধভাবে বন্ধের চেষ্টার প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি পোশাক কারখানার নির্মীয়মাণ ভবনের লিফটের অবকাঠামোর নিচ থেকে মো. সাজ্জাত হোসেন (২০) নামের এক শ্রমিকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গত রবিবার রাতে এবং সোমবার সকালে দুই দফায় প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। শ্রমিক অসন্তোষ গতকাল মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা এবং বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১১টার দিকে সেখানে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের প্রধান এই রপ্তানি খাতটিতে এমন অস্থিরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) মতে, এরই মধ্যে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করে অন্য দেশে চলে গেছে। এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অনেক গার্মেন্টস কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। কাজেই শিল্পের স্বার্থে অবিলম্বে শ্রমিক অসন্তোষের অবসান হওয়া প্রয়োজন।