দেশের অর্থনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।
ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিল্প, ব্যবসা,
বিনিয়োগ-সব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আগের সরকারের ভুল
নীতির রেশ কাটেনি এখনো।
ডলারপ্রবাহ সামান্য বাড়লেও সংকট আছে।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় অব্যাহতভাবে বাড়ছে
সুদের হার। ফলে উচ্চ সুদের হারে বিনিয়োগ স্থবিরতা প্রকট হচ্ছে। সহিংসতা,
শিল্পাঞ্চলে টানা অস্থিরতা, বিক্ষোভ, সংঘর্ষ থেমে নেই।
চাঁদাবাজি বন্ধ
হয়নি। নানা অজুহাতে দাবিদাওয়ার আড়ালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল
করে তোলা, নিরপরাধ ব্যবসায়ীদের হয়রানিমূলক মামলাসহ বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত
ঘটনায় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা মহলে আস্থাহীনতা, শঙ্কা, ভয় আর উদ্বেগ ছড়িয়ে
পড়ছে। থমকে আছে ব্যবসার প্রসার ও নতুন বিনিয়োগ।
আগের সরকারের অব্যাহত ভুল নীতিতে এমনিতেই দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, শিল্পের প্রসার ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক পরিস্থিতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
সম্প্রতি
অতি উৎসাহী একটি চক্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা
করে যাচ্ছে। অন্যদিকে নির্বিচারে মামলা-হামলা দেওয়া হয় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন
পেশাজীবীকে। একদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি চলছে, অন্যদিকে ব্যাংক
খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু সাহসী সংস্কার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। লেনদেনে
কড়াকড়ি ও কিছুদিন এলসি খোলা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে
ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানো হয় কয়েক দফা।
এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ
কমে যায়। ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকির পাশাপাশি
ব্যবসা প্রসারেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায় শ্লথগতির কারণে
ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের ব্যবসা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি
হচ্ছে না। উল্টো অনেকের চাকরি খোয়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে। উদ্যোক্তারা আশঙ্কা
করছেন, সামনে দেশের কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতে স্থবিরতা দীর্ঘায়িত হবে।
পোশাকশিল্পে
লাগাতার বিক্ষোভ, ধর্মঘট চলতে থাকায় বিদেশে পোশাকের ক্রেতাদের কাছে ভুল
বার্তা গেছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে তাঁরা বাংলাদেশে আসা বন্ধ রেখেছেন।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলমান শ্রম অসন্তোষের কারণে তিন মাস ধরে
(জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে আসছেন না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
এবং অনিশ্চয়তা নিয়ে কারখানা চালাতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। এমন সংকট চলতে
থাকলে দেশে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থানে বড় ধরনের প্রভাব
পড়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক
সময়ে ব্যবসার পরিবেশে বড় সমস্যা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি।
দেশের অর্থনীতির
সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে
সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ কখনোই খুব ভালো ছিল না।
বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) অতীতে যেসব
‘ডুইং বিজনেস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের
অবস্থান সব সময় নিচের দিকেই থেকেছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় পর্যায়ের
১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠন আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান
উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান
জানান। বাংলাদেশের নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সারাহ কুক গত মাসের শেষার্ধে
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে ব্যবসার
পরিবেশের উন্নতি হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন
বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাণিজ্য
উপদেষ্টা বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা।
দেশের
অর্থনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই
নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি
না হলে নতুন উদ্যোগ কমে যাওয়াসহ ব্যবসায় মন্দা দেখা দিতে পারে। প্রবৃদ্ধি
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মানুষের কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
আমাদের প্রত্যাশা, ব্যবসার ওপর থেকে বহুমুখী চাপ কমাতে হবে। কাটাতে হবে
আস্থার সংকট।