রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
২১ আশ্বিন ১৪৩১
শরতের টানা বর্ষণে কুমিল্লায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
শীতকালীন আগাম সবজি চাষ ব্যহত
রণবীর ঘোষ কিংকর:
প্রকাশ: রোববার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৪৬ এএম |





  শরতের টানা বর্ষণে কুমিল্লায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
এখনও বন্যার ক্ষত শুকায়নি কুমিল্লার কৃষকদের। প্রবল বর্ষনে সৃষ্ট বন্যার রেশ কাটিয়ে উঠার সুযোগ পাচ্ছে না এ জেলার কৃষক। শরতের শেষ দিকেও বর্ষার যৌবনতার যেন এতটুকু কমতি নেই। প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে বৃষ্টি। কোথাও প্রবল বাদল আবার কোথাও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কখনও রোদ বৃষ্টির খেলা, আবার কখনও দিনের বেলায়ও সূর্য্যরে মুখ দেখে না কুমিল্লাবাসী। এমন বৈরি আবহাওয়ায় তলিয়ে গেছে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় সৃজিত ফসলের মাঠ। অবস্থা দৃষ্টে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের উপর যেন ম‘রার উপর খাড়ার ঘা’। 
কুমিল্লা জেলার সবজি খ্যাত উপজেলা হিসেবে চিহ্নিত জেলার চান্দিনা, বুড়িচং, দেবীদ্বার উপজেলা। বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা প্লাবিত হওয়ায় পর কৃষি প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের ব্যক্তি উদ্যোগে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠে। বিধিবাম! টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলা, তলিয়ে গেছে রোপনকৃত ধান, ধানের বীজতলা ও সবজির মাঠ। এসব পরিস্থিতিতে ফসলী মাঠের পানি না শুকালেও দুঃচিন্তায় কৃষকের চোখের পানি যেন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। 
কৃষকদের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। জেলা জুড়ে অবাধে পুকুর ভরাট, নিয়মিত খাল খনন না করা, নিয়মনীতি না মেনে খালের উপর স্থাপনা তৈরি, খালের উপর ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ, খাল ভরাট, ফসলী জমিতে বাধ দিয়ে মাছ চাষ সহ নানা কারণে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে পানি প্রবাহের পথ। যে কারণে ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষকদের সৃজিত ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জুলাই ও আগস্ট মাসেই জেলায় ২ হাজার ৬৯৭ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। ওই দুই মাসে সবজি চাষে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮৭ হেক্টর। এছাড়া রোপা আমন বীজতলা, রোপ আমন ধান, রোপা আউস ধান, বোনা আমন ধান, আখ ও সবজি সহ ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭১৩ হেক্টরের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর। আংশিক ক্ষতির পরিমানও ৩৩ হাজার হেক্টরের বেশি।  
সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অক্টোবর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অতিবৃষ্টিতে ধান ও শাক-সবজির জমি আক্রান্ত হয়েছে অন্তত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর। বৃষ্টি শেষ হওয়ার সাথে সাথে ক্ষতির পরিমাণই সিংহভাগ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। 
চান্দিনা উপজেলার তুলাতলী গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস মিয়ার চোখে মুখে এখন দুঃস্বপ্ন। কারণ তার প্রায় ৪৮শতাংশ সবজি ক্ষেত পানির নিচে। পানি সরে গেলেও কোনোভাবে রক্ষা করতে পারবেন না এ ফসল। এরই মধ্যে ক্ষেতের সবজি গাছ মরা শুরু করেছে। চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এবছর তিনি তার ওই জমিতে অধিক লাভের আশায় উন্নত জাতের লাউ চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলে বাজার দর ভালো থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় লক্ষাধিক টাকা বিক্রির সম্ভাবনা ছিল। বর্তমানে তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সব লাউ গাছের চারা গুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছি বলেই কান্না ভেঙে পড়েন তিনি। 
কৃষক আলম, ইসমাইল, খোরশেদ সহ প্রায় ২০-২৫ জন লাউ চাষির এখন সব স্বপ্নই মাটি। জানা যায় তুলাতলী গ্রামের কৃষি মাঠে এবছর ১৫০ শতাংশ জায়গা লাউ চাষ করেন কৃষকরা। তাঁরা বলেন কয়েক মাস পরেই সবজি বাজারে তোলার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু ওই স্বপ্ন এখন পানিতে ভেষে গেছে। 
ছায়কোট এলাকার ধান চাষি বাবুল মিয়া বলেন- এবছর আমি ৭৫ শতাংশ জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। পুরো ক্ষেতের ধান গাছ  এখন পানিতে ভাসছে। এগুলো তুলে আনার সম্ভাবনা নেই। কাঁচা ধান আসার আগেই সব গাছ পানির নিচে নিমজ্জিত হচ্ছে।
কৃষক ফজলুল করিম বলেন, সবেমাত্র ধানের শীষ বের হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে সব ধান গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে।
চান্দিনা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মাজেদুল ইসলাম জানান, পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিল এলাকার ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। আমন ক্ষেত ও সবজি ক্ষেতে পানি জমে আছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানসহ ফসলের ক্ষতি কম হবে।
তিনি আরও জানান, উপজেলায় প্রায় ৫ হাজর ৫০০ হেক্টর ধানি জমি এবং ২৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে।  তার মধ্যে ৫০ হেক্টর ধানি জমি নষ্ট হয়েছে। সবজি জমি নষ্ট হয়েছে প্রায় ১৩০ হেক্টর।
কুমিল্লা জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, এ বছর কুমিল্লার কৃষকের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা। বন্যার পানি সরতে না সরতেই বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। যে পরিমাণ ফসলের জমি আক্রান্ত হয়েছে দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমবে। না হয় ক্ষতির পরিমান বাড়বে। বর্তমান সময়ের বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ ব্যহত হচ্ছে। এ জেলার কৃষকরা ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এখনও যাদের উচু জায়গা আছে সেখানে সবজি চাষে কৃষকরাই এগিয়ে আসা দরকার। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বদা পাশে আছে। 














সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি বিএনপির সংস্কারে গুরুত্ব জামায়াতের
মামলার আসামি মৃত তিন আওয়ামীলীগ নেতা
প্রেমের টানে ইন্দোনেশিয়ার তরুণী কুমিল্লায়, বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে
কুমিল্লায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৯৩টি মণ্ডপে বিএনপির উপহার প্রদান
বিএনপিনেতা আবদুর রউফ চৌধুরী ফারুকের ইন্তেকাল
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
চৌদ্দগ্রামে র‌্যাবের অভিযানে আ’লীগ নেতা গাজী শহিদ গ্রেফতার
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেফতার
মামলার আসামি মৃত তিন আওয়ামীলীগ নেতা
এক সপ্তাহে বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেলো ৪১১ মেট্রিক টন ইলিশ
প্রেমের টানে ইন্দোনেশিয়ার তরুণী কুমিল্লায়, বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২