কুমিল্লার
লালমাইয়ে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) গভ: রেজি নং-
এস-০৪৮৮-৮-৬-১৯৯১-২০১৬ নামের একটি ভুয়া এনজিও ঋণ দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ
থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ
চক্রের ফাঁদে পড়ে অর্থ হারিয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। উপজেলার হরিশ্চর
চৌরাস্তার শহীদুল ইসলামের বাড়িতে অফিস ভাড়া নিয়ে প্রতারণার ফাঁদের মাধ্যমে
এই অর্থ আত্নসাতের ঘটনা ঘটে। আমেনা বেগম,শাহিনুর আক্তার, আয়েশা বেগম, ভুলু
আক্তার, রাবেয়া বেগম,জাহানারা বেগম, আমেনা খাতুনসহ অসংখ্য ভুক্তভোগী জানান,
এনজিওটি গত ১ অক্টোবর উপজেলার হরিশ্চর চৌরাস্তা বাজারের পাশে একটি অফিস
ভাড়া নেয়। এরপর আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারী সদস্যদের ঋণ সহযোগিতা দেয়ার
কথা বলে জামানত হিসাবে বা সঞ্চয় হিসাবে ২ শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায়
অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এনজিওটির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পরিচয় দেয়া এক
ব্যক্তি মো. মিজান নামে একটি সঞ্চয় বইয়ে সীল পাওয়া যায় ,যদিও ব্রাঞ্চ
ম্যানেজারের আসল পরিচয় কী সেটা নিশ্চিত নন কেউ। ঋণ বিতরণের দিন ঘনিয়ে এলে
সংস্থার লোকজন ৬ অক্টোবর থেকে অফিস ফেলে পালিয়ে যায়।
৭ অক্টোবর সোমবার দুই
শতাধিক গ্রাহক ঋণ নিতে এসে হরিশ্চর শাখা অফিস চৌরাস্তা বাজার এলাকার
শহীদুল ইসলামের বাসার সামনে ভিড় করতে থাকেন। কিন্তু অফিসে তালা ঝুলছে কাউকে
পাওয়া যায়নি। বাড়ির মালিক শহীদুল ইসলাম জানান, ৬ অক্টোবর রাত থেকে তাদের
আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ির মালিক ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বা এনজিওটির কোনো
কর্মকর্তার ভোটার আইডি কার্ড না নিয়েই মৌখিক লাখ টাকা চুক্তিপত্র করে ভাড়া
দেন। এর আগে গ্রাহকরা বাড়ির মালিকের কাছে তথ্য নিতে গেলে তিনি এনজিওর
সুনাম করে বলেন, কোন অসুবিধা হবে না আপনারা টাকা জমা রাখতে পারেন । অর্থ
হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী ১৩ জনের স্বাক্ষরিত এবং সোহাগ ভূঁইয়া বাদী
হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেন। পরে লালমাই থানায় অভিযোগ
দায়ের করেন । অভিযোগকারী রাবেয়া বেগম বলেন, অ্যাকশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট
(এএসডি) ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে আমাকে ৩ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার শর্তে ৩০
হাজার টাকা নেয়। ঋণ দেয়ার সময় হলে আমি অফিসে গেলে তাদের কাউকে পাইনি।
হরিশ্চর
চৌরাস্তা ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো.শাহজাহান বলেন এনজিও অফিস
করেছে এখানে আমরা কেউ জানতাম না। সোমবার সকালে লোকজনের জটলা দেখে জানতে
পারি ভুয়া এনজিও ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অনেক টাকা হাতিয়ে
নিয়েছে।
এনজিওর ঢাকা ঠিকানায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা
হলে সাইফুল ইসলাম নামে হিসাব রক্ষক পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন আমাদের কোন শাখা
নেই। ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাদের অফিস বলে জানান।
লালমাই
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাহ আলম বলেন, ভুক্তভোগীরা অ্যাকশন ফর
সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে
নেয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টির তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লালমাই
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহসান মুরাদ বলেন, ভুয়া এই এনজিও সম্পর্কে আমি
শুনেছি। অনেকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়ায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি
থানা পুলিশ দেখছে। তিনি আরো বলেন, একজন বাড়ির মালিক যদি কোন বাড়ি ভাড়া দেন
তাহলে অবশ্যই তাকে ভোটার আইডি কার্ড ও চুক্তিপত্র করতে হবে। আর এনজিওর
জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে
হবে।