শক্তিশালী
অর্থনীতি ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা চায় অন্তবর্তীকালিন সরকার। বিশে^র সব দেশের সঙ্গে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বাংলাদেশ সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ
ইউনুস। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি
ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিশে^র নানাহ সংকট নিয়েও কথা
বলেছেন জাতিসংঘে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ড. ইউনুস তার প্রণীত
‘থ্রি জিরো’- তথা শূন্য দারিদ্র, শুন্য বেকারত্ব ও শুন্য নেট কার্বন নি:সরণ
অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ প্রযুক্তি
এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের উপর এর বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের
সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বক্তব্য
বিশ^নেতাদের যেমন অনুপ্রাণিত করেছে তেমনি অনুপ্রাণিত করেছে দেশবাসীকেও। ড.
মুহাম্মদ ইউনুসের এবারের নিউইয়র্ক সফরে বারবার প্রমাণ মিলেছে যে, তিনি শুধু
বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি একজন বিশ^নেতা। দেশবাসীর প্রত্যাশা, বিশ^নেতারা
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আহ্বানে সাড়া দিবেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূণগঠনে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরই মধ্যে অর্থসহায়তা
দিয়েছে বিশ^ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্র। পর্যায়ক্রমে সহায়তা দেবে বিভিন্ন দেশ ও
সংস্থাও। বাংলাদেশের যে কোন প্রয়োজনে অন্তবর্তী সরকারের পাশে থাকার যে
আশ^াস বিশ^নেতারা দিয়েছেন, বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটবে, এটাই সকলে আশা
করছেন। এখানে সুদুর প্রসারী চিন্তার জগত ঋদ্ধ না হলেও নেতা হওয়া যায় এমন
অবস্থা এক অপ্রত্যাশিত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের সর্ব্বোচ্চ ক্ষমতায় ড.
মুহাম্মদ ইউনুসের অধিষ্ঠিত হওয়া এক অনন্য ঘটনা। ড. ইউনুস বাংলাদেশে
সুশাসনের জন্য সংস্কারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বিশ^বাসীকে আহ্বান
করেছেন। তিনি ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর দৃঢ় অবস্থান
ব্যক্ত করেছেন। দেশবাসী তাঁর এ অবস্থানকে স্বাগত জানায়। ২৮ সেপ্টেম্বর
২০২৪ইং অনুষ্ঠিত হল বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর ২৬তম জাতীয় কমিটির
সভা। আয়োজন অনাড়ম্বর হলেও সদস্যদের সক্রিয়তা অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে
তুলেছিল। এ সভার বাইরেও একজন মহতী সদস্যের প্রস্তাবনায় যা ছিল তার সংক্ষেপ
হচ্ছে-১। শেরে বাংলা নগরের সাবেক বাণিজ্য মেলার মাঠকে সংস্কার করে
শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত ময়দান ঘোষণা করা যেতে পারে ২। শিশু কিশোরদের
কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে আনুষ্ঠানিক খেলার মাঠ
থাকা আবশ্যক। যদি সম্ভব না হয় তবে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি মাঠ নিশ্চিত করা
যেতে পারে যা বর্তমান আন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষেই সম্ভব। ৩। জেলা ও
উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি পূর্বের নিষ্ক্রিয়তা কাটিয়ে সক্রিয় হতে পারে। ৪।
বনভূমি অত্যন্ত কম তাই প্রতি জেলায় কৃত্রিম বনভূমি তৈরি করা যেতে পারে। খাস
জমি বা বিশাল ভূমি অধিগ্রহন করে তা করা সম্ভব। ৫। মন্ত্রণালয় প্রতি জেলায়
একটি নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা পুন: প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করা উচিত। বাপা ৬৪টি
নদী বাছাইয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করতে পারে। ৬। গবেষণাকর্মে বাপা একটি
একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। ৭।
প্রশিক্ষণ বাপার সদস্যদের সক্ষমতা ও কাজের ক্ষমতা ও ক্ষেত্র অনেক বাড়াতে
পারে। ৮। পরিবেশ আইনগুলি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন ৯। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর
প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং এর সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানের
মালিক বা ব্যক্তি যাতে কোন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। এদিকে
সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেছেন,
ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার। যেসব খাল এখনো
উদ্ধার করা সম্ভব সেগুলো দিয়ে এ ব্লু নেটওয়ার্ক করা হবে। তিনি বলেন
অবৈধভাবে দখল হওয়া খাল উদ্ধারে রাজউককে প্রতি সপ্তাহে অভিযান পরিচালনা করতে
হবে। কোন অন্যায়কে বৈধতা দেয়া যাবে না। ২ রাজধানী ঢাকার উন্মুক্ত মাটিতে
ঘাস লাগাতে হবে এবং এ কাজে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন,
তোপখানার পরিকল্পনায় সবুজায়ন, জীববৈচিত্র ও জলাভূমিকে সংরক্ষণের কাজকে
অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিবেশের সাথে সংগতিপূর্ণ নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা
প্রয়োজন। সবুজ ও জলভূমি রক্ষায় সব বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ২৯
সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষিদ্ধ পলিথিন/পলিপ্রপাইলিন শপিং
ব্যাগের বিকল্প পাট/কাগজ/কাপড়ের ব্যাগের যে মেলার শুভ উদ্বোধন করেন মাননীয়
উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান তাহা প্রনিধানযোগ্য। অনেক আলোচনার পর বাপার
জাতীয় কমিটির আলোচনায় পলিথিনের বিকল্প পাটকেই রাখতে বলে। লিজ বাতিল করে
বন্ধকৃত সকল পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু ও আধুনিকায়ন সময়ের চাহিদা। লক্ষণীয়
যে, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালকগণ শুধু অফিসে বসে কাজ করে তাই পরিবেশ
রক্ষনে বর্হিবিভাগে সপ্তাহে ৩ দিন ও অর্ন্তবিভাগে (অফিসে) ২ দিন কাজ করলে
সামগ্রিক পরিবেশটি আরও ভাল হত বলে অনেক পরিবেশবিদদের ধারনা। পরিবেশের কাজটি
অনেক ব্যাপক তাই শুধুমাত্র একটি অংশ নিয়ে সমাধানের পথটি যদি মাননীয় পরিবেশ
বিষয়ক উপদেষ্টা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতেন তবে তা সুচারুরূপে সমাধান করে
যেতে পারতেন। একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে (তিন মাস) সেই একটি কাজ একজন পরিবেশবিদ
তার প্রস্তাবনায় শুধু দখলদার অর্থাৎ বনখেকু, ভূমিখেকু, পাহাড়খেকু, নদী ও
জলাধার দখলদারদের সারাদেশ থেকে উচ্ছেদ করে যেতে পারলে পরিবেশ প্রকৃতির আসল
কাজটি সমাধান হত বলে পরিবেশবাদীদের অভিমত। সকল রুটিনমাফিক কাজ চলবে তবে
একটি অংশে জোর দিলে তা সম্পন্ন করা সহজ হবে। সকল কাজে জোর দিলে কোনটাই
সম্পূর্ণভাবে করা সম্ভব হয় না। তাই দখলবাজদের উচ্ছেদ করে একটি অনন্য উদাহরণ
সৃষ্টি করে সামগ্রীক পরিবেশ উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়াই জাতির জন্য সবচে বেশি
প্রয়োজনীয়।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ