নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ডিম, আলু, পেঁয়াজ, তরিতরকারিসহ প্রায় সব পণ্যই সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। ক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘব করার উদ্দেশ্যে সরকার ১৯টি পণ্যে শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছে না।
এই সুবিধাও গিলে খাচ্ছে নানা ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখার জন্য সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে, তাদের প্রায় কোনো ভূমিকাই দেখা যাচ্ছে না। ফলে পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। নাকাল হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বিদায় নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা দৃশ্যপটের আড়াল হয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলের আমলা, আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট নানা ধরনের ব্যাবসায়িক জোট ও সিন্ডিকেট, টিসিবি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ডিলারসহ আগের সরকারের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বা পুরনো ব্যবস্থাই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। মাঝখানে কয়েক দিন কিছুটা থমকে থাকলেও এখন আবার তারা তাদের পুরনো চেহারায় ফিরে আসতে শুরু করেছে।
এরই প্রভাব পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। তা ছাড়া পণ্য পরিবহন, বাজার, দোকানপাটে আগের মতোই চলছে চাঁদাবাজি। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, চাঁদাবাজি আগের মতোই আছে, চাঁদাবাজদের মুখ বদল হয়েছে মাত্র।
বাজারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করে কেবল কিছু পণ্যের শুল্ক কমিয়ে কোনো লাভ হবে না।
এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাভের পাল্লাই কেবল ভারী হবে। সরকার চার কোটির বেশি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, প্রতিটি ডিম আমদানিতে সাকল্যে খরচ হয় সাত টাকার মতো। এটি দেখতে হবে, সেই ডিম আমদানিকারকরা কত দামে বিক্রি করছেন। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা কত দামে বিক্রি করছেন। সেই সাত টাকার ডিমও যদি ১৫ টাকায় বিক্রি হয়, তাহলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রায় ডিম আমদানি করে লাভ কী?
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সরকারের বাজার মনিটরিং কমিটি টাস্কফোর্স, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন-এসব সংস্থা এখন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। সরকারের বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করলেও এখনো আগের সরকারের দলীয় ডিলারদের কাছেই জিম্মি হয়ে আছে। এক কোটি পরিবারকে টিসিবির যে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও গেছে দলীয় লোকজনের কাছে। তাই সাধারণ মানুষ কার্ডের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
বাজারের বর্তমান অস্থিরতায় সাধারণ মানুষের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।